ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

গেজেট প্রকাশের ৩০ দিন

আইনের মারপ্যাঁচে ইশরাকের শপথ

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ইশরাকের আইনি নোটিশ

আইনের মারপ্যাঁচে ইশরাকের শপথ

ইশরাক হোসেন

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫ | ০১:০৬ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ | ১০:১৩

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হয় গত ২৭ এপ্রিল। গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পড়ানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সেই সময় শেষ হলেও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, আইনি জটিলতা থাকায় মেয়রের শপথ আয়োজন করা হচ্ছে না।

এদিকে, ইশরাককে মেয়র পদে শপথের দাবিতে আবারও ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁর সমর্থকরা। মন্ত্রণালয়ে ফের চিঠি পাঠিয়েছেন ইশরাকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এদিকে, ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনের কারণে ১৩ দিনেও নগর ভবনের অচলাবস্থা কাটেনি। গতকাল সোমবারও নগর ভবন ছিল তালাবদ্ধ। নগর ভবন থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। দ্রুতই এ মন্ত্রণালয় সচিবালয়ে স্থানান্তর হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।

তিনি গতকাল সোমবার রাতে সমকালকে বলেন, ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ হাইকোর্টের রিট খারিজের পরেই সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল। গত রোববার মেয়র হিসেবে শপথ নিতে হাইকোর্টে রিট করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এছাড়া রিট খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে একজন নাগরিকের পক্ষে লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা। জাহেদী বলেন, ‘যেহেতু আদালতে এখনও বিষয়টি বিচারাধীন, তাই আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি। এখন মঙ্গলবার গেজেট অনুযায়ী শপথ পড়ানোর শেষ সময় হলেও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সচিবালয়ে আগুন লাগার কারণে আমরা নগর ভবনে অস্থায়ীভাবে কিছুদিন কাজ করেছি। আমাদের সচিবালয়ের অফিস ঠিক হচ্ছে, কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সেখানে চলে যেতে পারব।’

এদিকে, মেয়র পদে শপথ চেয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে গতকাল ফের চিঠি দিয়েছেন ইশরাকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এর আগে গত ১৭ মে শপথ চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলেন ইশরাক। 

এখনও নগর ভবনে তালা
গতকাল বেলা ১১টা থেকে নগর ভবন চত্বরে বিক্ষোভ করছেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা। এ কর্মসূচির কারণে নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। আন্দোলনকারী সংগঠন ‘ঢাকাবাসী’র প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ইশরাক হোসেনকে মেয়রের শপথ পড়ানো না হয়, তাহলে আবার কঠিনতর আন্দোলনে নামব।’

আইনে কী বলা আছে
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইনে বলা আছে, গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ শপথ পড়াবে। মঙ্গলবার ৩০ দিন শেষ হচ্ছে। আমি মনে করি, এটি একটা খারাপ দৃষ্টান্ত এবং বেআইনি কাজ হয়ে গেল। ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না পড়ালে, আর শপথ পড়তে পারবে না, তা কিন্তু নয়। শপথ পড়াবে কর্তৃপক্ষ, আর পড়বেন যিনি নির্বাচিত তিনি। নির্বাচিত ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না পড়েন তাহলে ল্যাপস (তামাদি) হয়ে যায়। আর যদি কর্তৃপক্ষ না পড়ায় তাহলে ল্যাপস হবে না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অধিকার থেকে যাবে।’ 

এখন শপথ পড়াতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতে যাব; যেহেতু সরকার করেনি। এখানে ইশরাক হোসেনের কোনো দায় বা দুর্বলতা নেই। তিনি তো শপথ নিতে চেয়েছেন। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেনি। তাই আমরা ইশরাক হোসেনের সঙ্গে আলোচনার পর আদালতে যাব।’

নাগরিক সেবা চালুর দাবি
নগর ভবনের তালা খুলে নাগরিক সেবা সচল করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ নগরবাসী। কয়েকদিন ধরে নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নগরবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত তালা খুলে নাগরিক সেবা পুনরায় চালুর আহ্বান জানান।

আপিল বিভাগে আবেদনের শুনানি আজ 
ইশরাকের শপথের ব্যাপারে আইনজীবী মামুনুর রশিদের রিটটি গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট খারিজ করে দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা। আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আরও পড়ুন

×