ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা জাপান যাচ্ছেন কাল

টোকিওর কাছে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে ঢাকা

টোকিওর কাছে ১০০  কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে ঢাকা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

 কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫ | ০১:২৭ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ | ১১:২৩

চার দিনের সফরে আগামীকাল বুধবার ভোরে জাপান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরকালে নিক্কিই সম্মেলনে যোগ দেওয়া ছাড়াও তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সই হবে সাত সমঝোতা স্মারক। এ ছাড়া বাজেট সহায়তা এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণে ‘এক্সচেঞ্জ অব নোটস’ সই হবে বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে। টোকিওর কাছে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে ঢাকা। 

গতকাল সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী। প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। 

এদিকে গতকাল জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৮ থেকে ৩১ মে সরকারি সফরে জাপান সফর করবেন প্রধান উপদেষ্টা। সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া নিক্কিই ফোরাম ৩০তম ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দেবেন। এই সফরে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। সেগুলো হচ্ছে– প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনে জাপানের জেবিআইসি ঋণ চুক্তি, ওনডা ও নাকসিসের সঙ্গে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) আলাদা দুটি ভূমি-সংক্রান্ত সমঝোতা, ব্যাটারি ও সাইকেল কারখানা স্থাপন নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে সমঝোতা, বিডায় ওএসএস প্রযুক্তি স্থাপন নিয়ে জাইকার সঙ্গে সমঝোতা এবং দক্ষতা ও ভাষা উন্নয়নে মানবসম্পদবিষয়ক বিএমইটির সঙ্গে আলাদা দুটি সমঝোতা।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের খবর ও জাপান সফরে যে অনিশ্চয়তা ছিল– তা নিয়ে জানতে চাইলে রুহুল আলম বলেন, এখানে উপস্থিত হয়েছি প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর সম্পর্কে জানাতে। এর অর্থ হচ্ছে, যে তারিখ ও সময় বলা হচ্ছে, এ তারিখ ও সময়ে প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে যাচ্ছেন।

বাজেট সহয়তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাপান থেকে যে সহায়তা পেয়ে থাকে, তার বেশির ভাগই অনুদান। তবে তারা অনুদান দেওয়ার অবস্থান পাল্টে ভিন্ন ব্যবস্থায় যাচ্ছে। আমাদের দুই দেশের বিদ্যমান যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা অনুযায়ী বাজেট সহায়তা পাব। এটা সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা হবে। ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

সফরে অবকাঠামো প্রকল্পে সহায়তা চাওয়া হবে কিনা– উত্তরে সচিব বলেন, যে সমঝোতাগুলো সই হবে, তার মধ্যে অবকাঠামোগত বিষয় রয়েছে। এ সফরে প্রধান বিষয় হচ্ছে বাজেট সহায়তা। 

তিনি বলেন, আগামী ২৮ থেকে ৩১ মে জাপান সফর করবেন প্রধান উপদেষ্টা। ২৮ মে বিকেলে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের প্রেসিডেন্ট তারো আসো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২৯ মে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় নিক্কেই ফোরামে অংশ নেবেন। একই দিন বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও আয়োজিত একটি মানবসম্পদ উন্নয়ন সেমিনারে অংশ নেবেন তিনি। পরদিন সকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবারের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টাকে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।

সচিব বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। 

তিনি আরও বলেন, বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিয়ে জাপানি বিনিয়োগকারীদের অবহিতকরণ এবং বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এর পর বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণের উদ্দেশ্যে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ওই দিন বিকেলে জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে।

জাপান রাষ্ট্রদূতের সংবাদ সম্মেলন
প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে গতকাল বিকেলে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি সংবাদ সম্মেলন করেন। ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আগ্রহের সঙ্গে কাজ করছি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের আগে কোনো বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কিছু জানাই না। আমরা আশা করছি, চুক্তিগুলো ও নতুন যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে ইতিবাচক ফল আসবে। 

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিও) নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই এ চুক্তি সই হবে। তবে নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর।
ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের কারণে বিগ-বি প্রকল্পের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সাত রাজ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। পুরো অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে কানেকটিভিটি নিয়ে এগিয়েছি। বাংলাদেশে বিগ-বি প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি।

নতুন কোনো অবকাঠামো নির্মাণে জাপান আগ্রহী কিনা– উত্তের রাষ্ট্রদূত বলেন, নতুন অনেক কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। গত মার্চে রেলপথ, মহাসড়কসহ বেশ কিছু নতুন অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ।

ঢাকার কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট (ওএসএ) রয়েছে। এর আওতায় উচ্চমানের পাঁচটি টহল জাহাজ নির্মাণ চলছে। যত শিগগির সম্ভব এগুলো হস্তান্তর করা হবে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় প্রতিনিধিদের মধ্যে সফর বিনিময় চলছে, সামনেও অনুষ্ঠিত হবে।

সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি নিয়ে কোনো চুক্তি হবে কিনা– উত্তরে সাইদা শিনইচি বলেন, দুই বছর আগে আমরা ঘোষণা দিয়েছি যে, চুক্তি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। আমরা একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছি।

 

আরও পড়ুন

×