ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আসছে জুলাইয়ে চূড়ান্ত হতে পারে জুলাই সনদ

আসছে জুলাইয়ে চূড়ান্ত  হতে পারে জুলাই সনদ

সুজনের নাগরিক সংলাপে আলী রীয়াজ

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫ | ২৩:৪১

জুনের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হলেই জুলাই সনদ তৈরি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, কমিশন কতগুলো মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আশা করি, জুলাইয়ের মধ্যে একটি নাগরিক সনদ করতে পারব। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। জনগণের প্রত্যাশা যাচাইয়ের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপের অংশ হিসেবে এ আয়োজন করা হয়।
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় সনদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করা। আমরা এ সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি চুক্তি সইয়ের চেষ্টা করছি, যাতে নাগরিকরা দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে পারে।
সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিনের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, কমিশনের আরেক সদস্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, সুজনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন, ভয়েস ফর রিফর্মের উদ্যোক্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মাহ্‌রুখ মহিউদ্দিন প্রমুখ।

লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। 
সংলাপে বক্তারা জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নাগরিক দলগুলোর অঙ্গীকার থাকতে হবে। সব দলের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে এ অঙ্গীকার থাকা জরুরি। প্রয়োজনে জুলাই সনদে একটি ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ রাখতে হবে, যেন এই সনদ মানতে সব দল বাধ্য থাকে। তারা আরও জানান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য দরকার। দল, সরকার, সংসদ– সব স্থানে একই ব্যক্তি শীর্ষ পদে থাকলে ফের ফ্যাসিবাদ জন্ম নেবে। এ ধরনের পদ্ধতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়। বিশেষ করে, সরকারপ্রধান ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এতে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি কমে যায়।
নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ধারণা অবমাননাকর জানিয়ে বলা হয়, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখা এবং সত্যিকার ক্ষমতায়নের জন্য আসনগুলোতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সরাসরি নির্বাচন আয়োজন দরকার।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একমাত্র উপাদান নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই জার্মানি ও চেকোস্লোভাকিয়ায় স্বৈরাচারী শাসকরা ক্ষমতায় এসেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা– প্রয়োজনীয় সেই সংস্কার করা, যাতে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আর ফিরে না আসতে পারে। 
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা– সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটানো। এজন্য নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কার্যকর ও সোচ্চার ভূমিকা দরকার। নির্বাচন যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে পারে, সেজন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে কতগুলো আইন পাস হওয়া দরকার। একসঙ্গে দরকার রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার আনা।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করা জরুরি। অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখে এমন দেড় কোটি মানুষকে ভোটের বাইরে রাখা– এটা হতে পারে না। তবে আপত্তি জানিয়ে ঢাবি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ভোটার হওয়া আর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এক বিষয় নয়। যারা দ্বৈত নাগরিক, তাদের অন্য রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য থাকে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কমিশনের প্রধান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অনেকেরই দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। 

আরও পড়ুন

×