জনগণের মতামত নিলে বাজেট একমুখী, গতানুগতিক হতো না: বিএনপি

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫ | ২০:৪৯
রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত না নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটি বলেছে, সরকার চাইলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারত। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নিতে পারতেন। রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নিলে বাজেট একমুখী, অংশগ্রহণহীন এবং গতানুগতিক ধারার হতো না।
বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিএনপি সর্বক্ষেত্রে এই সরকারকে সহযোগিতা করছে। দেশে এখন সংসদ বা গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় তারা আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নিলে বাজেট হতো সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক। এতে নতুন চিন্তার প্রতিফলন ঘটত। দেশের বিভিন্ন কণ্ঠের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারত এ বাজেট। কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগানো হয়নি বা করা হয়নি।
আমীর খসরু বলেন, বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্পকারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ। বিশাল সুদের হারের সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্যম ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ‘ডাবল ডিজিট’। এটি কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। জনগণের মতামত নিলে দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের সরকারের আমলের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, অন্যান্য কলেজ ও স্কুলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা যেত। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষার এসব ক্ষেত্রকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে।
অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা কাটাতে বাজেটে সুস্পষ্ট রূপরেখার প্রয়োজন ছিল বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্পকারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি। বিশাল সুদের হারের সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।
ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমানো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো ও ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ কমানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে নেই বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, এগুলো না থাকায় উদ্যোক্তারা অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হবেন।
অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বাড়ানোয় ডিজিটাল উদ্যোক্তারা চাপে পড়বেন মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, এতে তরুণ উদ্যোক্তাদের হতাশা বাড়বে। উদ্ভাবনও নিরুৎসাহিত হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক। খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও করজাল সম্প্রসারণের মতো পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আহরণে নতুন ভিত্তি তৈরি হতো। সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। কালো টাকা সাদা করার সুযোগে কর ফাঁকি যারা দেয়, সরকার তাদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার। এতে কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।
- বিষয় :
- বিএনপি
- বাজেট ২০২৫-২৬