৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নূরুল হুদার বিরুদ্ধে

.
হকিকত জাহান হকি
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ২৩:৫০
বাজারমূল্যের চেয়ে দশ গুণ বেশি দামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে। দেড় লাখ নিম্নমানের ইভিএম কিনে সরকারের প্রায় ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকা ক্ষতি বা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, সরকারি আর্থিক বিধিবিধান লঙ্ঘন, কোনো সমীক্ষা ও টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করে সোনাবাহিনীর কাছ থেকে ইভিএম কেনার অভিযোগ রয়েছে নূরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মকর্তাকে গত বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নির্বাচন কমিশনে গুণগত মানসম্পন্ন ইভিএম সরবরাহ করা হয়েছে কিনা এবং প্রতিটি ইভিএমের মূল্য সঠিক ছিল কিনা– দুদক এ-সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ বের করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ টিম এই অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিন কর্মকর্তা ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে অভিযোগ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। বাকি তিনজন হাজির হননি। পর্যায়ক্রমে ইসি ও মেশিনটুলস ফ্যাক্টরির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ইভিএম ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির একটি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এই অভিযোগ নিয়ে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
দিনের ভোট রাতে দেওয়ার অভিযোগে গত ২২ জুন সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ও দুদক একযোগে তদন্ত করছে।
দুদক যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা হলেন– নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. ফরহাদ হোসেন, সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ও সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আখতার। ওই দিন যারা হাজির হননি তারা হলেন– নির্বাচন কমিশন সচিবালযের উপপ্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী, সহকারী প্রধান মো. মাহফুজুল হক ও আইটি সিস্টেম কনসালট্যান্ট এএইচএম আব্দুর রহিম খান।
সূত্র জানায়, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক নিরীক্ষায় ইভিএম ক্রয়ে ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকার ক্ষতি বা আত্মসাতের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দুদকে দেওয়া অভিযোগে সরকারের এই বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে উল্লেখ রয়েছে।
দুদক জানায়, নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে দেড় লাখ ইভিএম সোনাবাহিনীর কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছিল। ডেলিগেটেড ক্রয় পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীকে কেনার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে তাদের মেশিনটুলস ফ্যাক্টরি থেকে ক্রয় করে নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করে।
এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বাজারদর কমিটির দরটাই আমলে নেওয়া হয়েছিল। তারা নিজেরা বাজারদর যাচাই কমিটি গঠন করেনি। দুদক জানায়, তারা নির্বাচন কমিশন ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। আরও কাগজপত্র সংগ্রহ করা হবে।
- বিষয় :
- আত্মসাৎ