বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক রক্তের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ: কাদের

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৬:২০ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৬:৫৯
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক একাত্তরের রক্তের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ। দুই দেশের এই বন্ধুত্ব কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অধিকতর উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং উন্নয়নমুখী। দুই দেশের সম্পর্কের সেতুবন্ধন সময়ের পরিক্রমায় দিনদিন নবতর মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে।
শান্তিপূর্ণভাবে দুই দেশের দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধান ও ছিটমহল বিনিময়ের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা সমাধান ও শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় দু'দেশের পারস্পরিক আস্থাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রজয়ের মামলায় ভারত আপিল না করে বন্ধুসুলভ যে আচরণ করেছে, যা সম্পর্কের সূত্রকে আরও সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে, তার মাধ্যমে তিস্তা সমস্যা ও অন্যান্য নদীর পানিবন্টনের আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তিস্তার পানি বন্টন অচিরেই হতে পারে। এ নিয়ে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার ও ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকারের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া থাকলে অনেক অমীমাংসিত ইস্যু সহজেই সমাধান সম্ভব। যার প্রমাণ বাংলাদেশ ও ভারত।
তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে দু'দেশের মধ্যে আলোচনা ও বৈঠক চলছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড 'জিরোতে' আনার বিষয়ে সফল হবো বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে দু'দেশের সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। সীমান্তে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দু'দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কাউকে সীমান্তে বাংলার মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। ভারত-বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেেেবও শীর্ষ পর্যায়ে পিপল টু পিপল অচিরেই আলোচনা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। আজকের এই সুসম্পর্কের সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় দু'দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে।
করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপারে ভারত সরকার বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের আজকের যে সম্পর্ক, তার জন্য আওয়ামী লীগের অনেক অবদান রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারনে আওয়ামী লীগ অনেক নেতাকর্মীকে হারিয়েছে। এসব নেতাকর্মীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে এসে জীবন উৎসর্গকারী অর্ধশতাধিক ভারতীয় সৈনিকের আত্মত্যাগের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দোরাইস্বামী বলেন, 'আমার বাবা পাইলট হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাই আমি খুব গর্বিত।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরঞ্জীব হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের স্পিরিট। বাংলাদেশের জন্য তার আত্মত্যাগ এদেশের জনগণ ভুলতে পারবে না। এদেশ স্বাধীন হয়েছে ৩০ লাখ শহীদ, নারীর সম্ভ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে।
এর আগে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে স্বাগত জানান। পরে দোরাইস্বামী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দু'দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।