দুদক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকেই সুরক্ষা দিল

ড. ইফতেখারুজ্জামান
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৫:২০
শরীফ উদ্দিনকে ঘিরে যা ঘটেছে, সেটা আমি মনে করি দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য এবং সার্বিকভাবে দুর্নীতির বিরোধী আন্দোলনের জন্য একটি দুঃসংবাদ, অশনিসংকেত। দুদকের ব্যাপারে আস্থার সংকট সব সময়ই ছিল, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটা আরও গভীর হলো। এ অবস্থা থেকে দুদক জনগণের আস্থায় আবার ফিরতে পারবে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে দুদক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, না দুর্নীতির সহায়ক সংস্থা- সে প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে কোনো প্রতিষ্ঠান তার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি যৌক্তিক ভিত্তি থাকে, তাহলে অপসারণ করতে পারে। তবে উদ্বেগের বিষয়, যে বিধিতে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়েছে, সেটি এখনও আদালতে বিচারাধীন। কাজেই শরীফ এবং তার সহকর্মীরা এর প্রতিবাদ করছেন। যদি আদালতের রায় দুদকের পক্ষেও যায়, অর্থাৎ ৫৪(২) ধারায় কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণের এখতিয়ার যদি আদালত দুদকে দেয়, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়। সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থার একজন কর্মকর্তা আইনি ভিত্তির ওপর নির্ভর করে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে, সাহসের সঙ্গে দুর্নীতিকে মোকাবিলা করার জন্য, দুর্নীতিতে যারা জড়িত ছিল তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য জোরালো প্রয়াস নিয়েছিলেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বড় ধরনের যেসব সিন্ডিকেট দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল, তাদের একাংশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে এই কর্মকর্তা তদন্ত করে মামলার সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে অবশ্যই তিনি সেই সিন্ডিকেটের একাংশের বা সার্বিকভাবে বিরাগভাজন হয়েছেন। এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। এই সিন্ডিকেটে জড়িতরা এই কর্মকর্তাকে চাকরির হুমকি, এমনকি জীবনের নিরাপত্তার হুমকিও দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এই সিদ্ধান্তটা নিল, দুদকের কাছে প্রত্যাশা ছিল, এই কর্মকর্তার পাশে তাদের দাঁড়ানো, তাকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাকে যথার্থভাবে কাজ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। তাকে সুরক্ষা না দিয়ে দুদক তাকে অপসারণ করল।
গণমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে দেশবাসীর ধারণা অত্যন্ত প্রকট হয়েছে, যিনি দুর্নীতিবিরোধী সৈনিক তাকে অপসারণ করে যারা দুর্নীতিবাজ, যারা দুর্নীতির সিন্ডিকেটের হোতা- তাদেরই সুরক্ষা দিল দুদক।
এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথিত ওই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে নিরপক্ষে ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হলো, নাকি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট, যারা রুই-কাতলা তাদের অঙ্গুলি হেলনে কিংবা তাদের চাপে সরিয়ে দেওয়া হলো? কারণ, এখানে কারা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, সেটা বিবেচনা করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে শরীফ উদ্দিন দুর্নীতির অনুসন্ধান করে মামলা করেছেন, তারা কিংবা তাদের সহযোগীরাই এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করেছেন। কাজেই এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্যটা দেশবাসীকে দুদকের জানানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ
- বিষয় :
- ড. ইফতেখারুজ্জামান
- দুর্নীতি দমন কমিশন