ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

'মেসির হাতে শিরোপা ওঠায় বিশ্বকাপ পূর্ণতা পেয়েছে'

'মেসির হাতে শিরোপা ওঠায় বিশ্বকাপ পূর্ণতা পেয়েছে'

মো. আব্দুল জলিল মিয়া

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৮:৩৫ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:৩৪

সৌদি আরবের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হারের পর কয়েক ঘন্টা চা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মেসি ও ম্যারাডোনার প্রতি তার এমনই আবেগ। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে ৩৬ বছরের দুঃখ ঘুচল তার। যারা সচরাচর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গিয়েছেন, তারা সবাই না হলেও অধিকাংশই তাকে ভালো করেই চেনেন। তিনি হলেন টিএসসির চা বিক্রেতা ‘স্বপন মামা’। ফুটবলপ্রেমী এই মানুষ টিএসসির পরিচিত মুখ। তার ভালো নাম মো. আব্দুল জলিল মিয়া।

এই টিএসসিতে বসেই ৩৬ বছর আগে ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বচক্ষে উপভোগ করেছেন তিনি। গত রোববার আবার একই স্থানে বসে কিংবদন্তী লিওনেল মেসির হাতে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দেখলেন তিনি। এরআগে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার জয়ও তিনি দেখেছেন। তখন তিনি ১৬ বছর বয়সের তরুণ মাত্র। 

সোমবার বিকেলে চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করতে জানালেন আনন্দ-অনুভূতির কথা। কথা শেষে একটা ছবি তোলার জন্য বলা হলো। ওমনি মাথায় বাঁধলেন আর্জেন্টিনার ফিতা। হাতে পরলেন আর্জেটিনার ব্যান্ড। চোখে পরলেন নীল-সাদা রঙের চশমা। গায়ে তো আকাশী রঙের জার্সি পরাই ছিল। হাস্যোজ্জ্বল মুখে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে বললেন, ‘এবার ছবি তোলা যায়!’

স্বপন মামা বলেন, ‘মেসির হাতে একটি বিশ্বকাপ ওঠেছে। এতে বিশ্বকাপই পূর্ণতা পেয়েছে। শুরুতে ভালো অবস্থানে থাকলেও পরে খুব কষ্ট হয়েছে তাদের। তবে শেষমেষ টাইবেকারে যেন ভাগ্য তাদের সহায় হয়েছে। খুব চিন্তায় ছিলাম। এত খুশি লাগছে বলার মত না। মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখা স্বপ্ন সত্যি হয়েছে বৈ কিছু নয়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮৪ সালে আমি টিএসসিতে আসি। এর দুই বছর পরেই বিশ্বকাপ। তখন এত উচ্ছ্বাস, প্রযুক্তি ছিল না। টিএসসির কর্মচারী এবং দোকানদাররা মিলে ৫০ টাকা করে দিয়ে জগন্নাথ হল থেকে টিভি ভাড়া করে আনছিলাম। এই টিএসসিতে বসে খেলা দেখি। ম্যারাডোনার হাতে বিশ্বকাপ দেখে পরাণ জুড়িয়ে গেল। আরেকবার এরকম অনুভূতি হইল মেসির হাতে কাপ দেইখা।’

এর আগে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপও তিনি দেখেছেন বলে জানান। তখন তিনি ১৬ বছরের তরুণ। তেমন বুঝতেন না, তবে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা জন্মায় তখনই। তিনি বললেন, আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরে। গ্রামে তখন মাত্র দুইটা টিভি। আমরা তখন বয়সে ছোট, বয়স তখন ১৬ বা ১৭ বছর হবে। সেই বছর দেখলাম আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়। কী অসাধারণ খেলা। তখন থেকেই আর্জেন্টিনার প্রতি প্রেম। এরপর ম্যারাডোনা এলো, এখন মেসিরে দেখলাম। এই আবেগ কাউকে বুঝানো যাবে না।’

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা থামেনি তখনও টিএসসিতে। চা দোকানে গোল হয়ে চলছে আড্ডা এবং ম্যাচের চুলচেরা বিশ্লেষণ। এমনই একজন আর্জেন্টিনার সমর্থক তানভীর আলম চৌধুরী। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, এই সমস্ত কিছুর কৃতিত্ব কোচ স্কালোনির। তার কৌশলে আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয়েছে। মূলত স্কালোনির উৎসাহ জুগিয়ে মেসিকে বিশ্বকাপ খেলায় রাজি করিয়েছেন। আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য এ জয় খুব দরকার ছিল।

আরেক সমর্থক নাসরিন সুলতানা বললেন, ‘মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠেছে এটাই বড় কথা। মেসি সর্বকালের সেরা এই বিতর্ক এখন আর নেই।’

কথা হলো ব্রাজিলের একজন সমর্থকের সঙ্গে। তার নাম মুহিবুল ইসলাম মুহিব। বললেন, মেসি একটি বিশ্বকাপ পেয়েছে খুশি হয়েছি তবে আর্জেন্টিনার প্রত্যেক ম্যাচে রেফারিদের তাদের প্রতি একটি টান লক্ষ করেছি। যে পেনাল্টি প্রথমে দিল এটা কোনোভাবে পেনাল্টি হয় না। এতে প্রথমেই ফ্রান্সের মনোবল ভেঙে গিয়েছে।’

আরও পড়ুন

×