নির্বাচনকে ঘিরে সংখ্যালঘুরা শঙ্কিত: রাণা দাশগুপ্ত

সেগুনবাগিচায় বিএমএ মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভা। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩ | ১৩:৪৮ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ | ১৩:৪৮
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপকমাত্রায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের শঙ্কা জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেছেন, অতীতে যেকোনো নির্বাচনের আগে-পরে একটি বিশেষ মহল সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তাদের লক্ষ্য একটাই- দেশটাকে সংখ্যালঘু শূন্য করা। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের কী হবে- তা নিয়ে আমদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়।
রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেছি, নির্বাচনের আগে আমাদের বড় ভয় হয়! কারণ নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘুদের খেলার ঘুঁটি বানানো হয়। এই অবস্থা থেকে বের হলে অবশ্যই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠনসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের দাবি আমলে নিয়ে গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করেছিল। তাই এই সাত দফা এখন সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। এগুলো বাস্তবায়ন সরকারের রাজনৈতিক দায়িত্ব। এই দাবিতে আমরা একাধারে আলোচনা ও আন্দোলন অব্যাহত রাখব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠির প্রসঙ্গে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ঠিক নয়। বরং পাকিস্তান আমল থেকেই এদেশে সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া চলে এসেছে।
তিনি বলেন, সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে দেশের আড়াই কোটি মানুষকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে সামরিক শাসকের করা রাষ্ট্রধর্মের সেই বিধানকে সংবিধানে পাকাপোক্ত রূপ দেওয়া হয়েছে। চলমান সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ অব্যাহত থাকলে আগামী দু’দশক পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে দেশটা সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক হয়ে যাক- তা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক মেনে নিতে পারে না।
২০০১-২০০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানান অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। একই সঙ্গে বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংখ্যালঘুরে উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য যোসেফ সুধীন মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অতুল চন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ।