ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

তিন মামলার বিচার হয়নি পাঁচ বছরেও

বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন

তিন মামলার বিচার হয়নি পাঁচ বছরেও

ছবি: ফাইল

ওয়াকিল আহমেদ হিরন

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ০৬:৩৫ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪:০১

 পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনে ঘটনায় ২৭ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় দগ্ধ ও আহত হন ৭১ জন। ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল ভবনগুলোর অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা। অগ্নিকাণ্ডের জেরে পৃথক তিনটি মামলা হয়।

অবহেলাজনিত মৃত্যু ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগে একটি এবং অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ ও নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষতিসাধনের অভিযোগে দুটি মামলা করে দুদক। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিচার শেষ হয়নি। দুদকের দুই মামলার বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্য গ্রহণে তেমন অগ্রগতি নেই।

আইনজ্ঞদের মতে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জবাবদিহির আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে বড় অগ্নিকাণ্ড ঠেকানো কঠিন হবে।

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মিল্টন দত্ত পরদিন বাদী হয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যু ও ক্ষতি সাধনের মামলা করেন। মামলায় ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে প্রধান আসামি করা হয়। পরে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মুকুলকে অব্যাহতি দিয়ে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় ডিবি পুলিশ। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন– ভবনের জমির মালিক এসএমএইচআই ফারুক, ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাজভীরুল ইসলাম ও ভবন পরিচালনা কমিটির সদস্য ছয় সদস্য সেলিম উল্লাহ, মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, ওয়ারদা ইকবাল, কাজী মাহমুদুন নবী ও রফিকুল ইসলাম।

মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত না হওয়ায় পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। তবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। এ সময় পলাতক থাকায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। 

সূত্র জানায়, এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা অনুমোদন থাকলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ভবনের উচ্চতা করা হয় ১৮ তলা পর্যন্ত। পরে তা ২৩ তলায় উন্নীত করা হয়। এ অভিযোগে ওই বছরের ২৫ জুন পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় রাজউকের ছাড়পত্র ইস্যু ও নকশা অনুমোদন না নিয়ে ভুয়া নকশা তৈরির মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক, বিক্রি ও অগ্নিকাণ্ডে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। মামলা তদন্ত করে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আসামিরা হলেন– রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম, এফআর টাওয়ারের মালিক এসএমএইচআই ফারুক, রূপায়ণ গ্রুপের কর্ণধার লিয়াকত আলী খান মুকুল ও রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান। তারা সবাই জামিনে আছেন। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢিমেতালে। ৪০ সাক্ষীর মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, অভিযুক্তরা ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী। বিচার হলেও তা হয় নামকাওয়াস্তে। নানা কৌশলে মামলার বিচার বিলম্বিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গরিবদের নিয়ন্ত্রণ করেন আইন; আর আইনকে নিয়ন্ত্রণ করে ধনিক শ্রেণি। এটাই বাস্তবচিত্র।’ 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মামলাজনিত কারণে ভবনটির বিষয়ে রাজউকও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রাজউকের বনানী এলাকার অথরাইজড অফিসার ইমরুল হাসান জানান, ভবনটির কাঠামোগত অবস্থাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। এ জন্য এটি ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে কিনা, তাও বলা যাচ্ছে না। সবকিছুই নির্ভর করছে মামলার সুরাহার ওপর। 

আরও পড়ুন

×