‘একীভূতকরণের আড়ালে অনিয়মে জড়িতরা যেন পার না পায়’

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪ | ১৫:৩৮ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ | ১৫:৫৮
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যাদের ব্যাংক দেওয়া হয়েছিল শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল চুরি। যে কারণে নানা ছাড়, নাম পরিবর্তন করেও পদ্মা ব্যাংক বাঁচানো যায়নি। এখন এক্সিমের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। একীভূতকরণের আড়ালে অনিয়মে জড়িত পরিচালক ও কর্মকর্তারা কোনোভাবে যেন পার না পায়। ঋণখেলাপিরা যেন ফাঁক ফোকড় দিয়ে বেরিয়ে না যায়।
শনিবার ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ’ বিষয়ক এ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির সভাপতি হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে এর পক্ষে বিতর্কে অংশ নেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বিপক্ষে ছিলেন বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা। বিজয়ী হয়েছে বিপক্ষ দল।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোথায় ব্যাংক দেওয়া হয় জানা নেই। এর আগে তিনি গভর্নর থাকা অবস্থায়ও নতুন ব্যাংক দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে দিচ্ছি–দিবো করে তিনি সময় পার করেন। অথচ ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যাংক দেওয়া হয়েছে। সুশাসনের অভাবে এখন আবার ব্যাংক একীভূতকরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে পায় না। তারা কি মাটির নিচে থাকে যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্যাংক খাতে সব চেয়ে বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে ভালো সমাধান আমানতকারীর দায়–দেনা মিটিয়ে দিয়ে ব্যাংক গুটিয়ে ফেলা। তবে আমাদের এখানে দুর্বল হওয়া ব্যাংক থেকে যেহেতু আমানতকারীর অর্থ দেওয়ার যায় না এ কারণে ব্যাংক একীভূতকরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মের পর পদ্মা ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে সেখানে সরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগ আনা হলো। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে ছাড় দেওয়া হলো। বিশ্বের কোথাও এমন হয় কিনা জানা নেই। তিনি বলেন, অন্য কোম্পানির ব্যবসা থেকে ব্যাংক আলাদা। যে কারণে অন্য সব ব্যবসা থেকে ব্যাংকের জন্য আলাদা কিছু নীতিমালা করা হয়। অন্যের টাকায় ব্যাংক চলে। আস্থার কারণেই মানুষ ব্যাংকের কাছে আমানত রাখে। ফলে এখানে সুশাসন থাকা সব চেয়ে জরুরি। নৈতিকতার চর্চা এখানে প্রধান ইস্যু। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, আমাদের এখানেও যথেষ্ট নিয়ম–নীতি আছে। তবে সমস্যাটা পরিপালনে। যে কারণে সুশাসনের ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি তিন ক্ষেত্রেই এখানে ঘাটতি আছে। পরিদর্শনে গিয়ে প্রথমেই একটি বায়োডাটা ধরিয়ে দেয় অমুককে চাকরি দিতে হবে। আবার অনিয়ম ধরা পড়লে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয় না। আমাদের এখানে শুধু বিদেশের উদাহরণ দেওয়া হয়। উন্নত দেশে অনিয়ম ধরা পড়লে রক্ষা নেই। আমাদের মতো ঋণখেলাপিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াতে পারে না। খেলাপিরা বিদেশে পেট্রোল কিনতে পারে না, বাড়ি ভাড়া পায় না, বিমানে চড়তে পারে না। আর আমাদের এখানে তারা ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পায়। এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের পর কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। প্রথমত, আমানতকারীর অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিতে হবে। দূর্বল ব্যাংকের কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিচালনার সঙ্গে জড়িত দায়ীদের ছাড় দেওয়া যাবে না। দুর্বল ব্যাংকের কারণে যেন সব ব্যাংক দুর্বল না হয়। এ জন্য ভালো লোকদের পরিচালনা পর্ষদে বসাতে হবে। ব্যবস্থাপনা থেকে পরিচালনা আলাদাভাবে চলতে দিতে হবে। এছাড়া আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক কি বললো সেটা না দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। নির্দেশনার অপেক্ষায় বসে না থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের পর মন্দ ঋণ কোনো একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়াই সমাধান। ওই সব ঋণের আসল সুবিধাভোগী কারা বের করতে হবে। আর এসব ঋণ যেন অবলোপন না হয় তা দেখতে হবে। তবে একীভূতকরণের পর পুনঃমূলধনীকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। সেক্ষেত্রে শেযার ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।