ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গণপূর্ত অধিদপ্তর

বাসা বরাদ্দে অনিয়ম তদন্তে প্রহসনের কমিটি

বাসা বরাদ্দে অনিয়ম তদন্তে প্রহসনের কমিটি

ছবি: সংগৃহীত

লতিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ১৯:৫১

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাজধানীর জিগাতলায় নির্মিত নতুন ভবনে বাসা বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি সমকালে ‘গণপূর্ত অধিদপ্তর: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করতে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয়ের আদেশের ২৬ দিন পর কমিটি গঠন করে অধিদপ্তর। কিন্তু যে কর্মকর্তার প্রভাবে এক অস্থায়ী গাড়িচালক নিয়মবহির্ভূতভাবে বাসা বরাদ্দ পান, সেই কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এতে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ওই কর্মকর্তার নাম শফিকুল ইসলাম। তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মাহাবুব হাসান এবং সদস্য সুপারেন্টেন অফিসার আবু জাফর সিদ্দিক।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী ‘ডি-২’ শ্রেণির বাসা পান ১০-১২তম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ‘ডি-১’ শ্রেণির বাসা বরাদ্দ নিতে পারেন সপ্তম-নবম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। ‘ই’ শ্রেণির বাসা কমপক্ষে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তারা নিতে পারেন, ‘এফ’ শ্রেণির বাসা নিতে পারেন কমপক্ষে পঞ্চম গ্রেডের উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা আর উচ্চশ্রেণির বাসা বরাদ্দ নিতে পারেন ‘গ্রেড-৩’ এর ওপরে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। তবে ‘ডি-২’ শ্রেণির বাসা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে বরাদ্দ দিতে হলে মূল বেতন ২২ হাজার টাকা ধরে তা থেকে বাসা ভাড়া বাবদ ৬০ শতাংশ টাকা কেটে নিতে হবে। কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্তা না করে গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুতল ভবনে পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল অনুযায়ী যাদের যে শ্রেণির বাসা পাওয়ার কথা নয়, তাদেরকে সেই শ্রেণির বাসা বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ১৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি আবাসন পরিদপ্তর বাসা বরাদ্দের অনিয়ম তদন্তের সুপারিশ করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র পাঠায়। মন্ত্রণালয় ওই পত্রের সূত্র ধরে ৪ এপ্রিল গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু গণপূর্তের বাসা বরাদ্দের সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ‘ম্যানেজ করার জন্য’ উঠে পড়ে লাগে। পরে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জানা গেছে, জিগাতলার ভবনে তার গাড়িচালক জামান হোসেন ‘ডি-২’ শ্রেণির বাসা পেয়েছেন। তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরে ‘অস্থায়ী গাড়িচালক’ পদে চাকরি করেন। নিয়ম না মেনে গণপূর্ত বিভাগের বাসা বরাদ্দ কমিটি তাকে বাসা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের প্রভাবে জামান বাসা বরাদ্দ পান বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখা-৪ এর অফিস সহায়ক ফারুক রহমান শেখকে ৬ মে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে বদলি করা হয়েছে। জানা গেছে, বাসা বরাদ্দের অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ করার অভিযোগ তুলে অবৈধ সুবিধা পাওয়া কর্মচারীদের চাপে তার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ছাড়া অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) এবং নিয়োগ পদোন্নতি কমিটি ও বাসা বরাদ্দ কমিটির সভাপতি শহীদুল আলম ওই কর্মচারীকে তার কক্ষে ডেকে ‘কবরে পাঠিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কক্ষে থাকা কর্মচারী ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ফারুক রহমান শেখ বলেন, ‘বদলির বিষয়টি অফিসের সিদ্ধান্ত। এর বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল আলম সমকালকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী কর্মচারীরাও বাসা বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। কমিটি গঠনে কোনো অনিয়ম হয়নি। এ ছাড়া আর কোনো বিষয়ে জানার থাকলে তিনি তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী লিখে পাঠাতে বলেন।

আরও পড়ুন

×