ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পালিয়ে বাড়িতে যেতে চেয়েছিল গৃহকর্মী, শেষে সাততলার কার্নিশ থেকে উদ্ধার

বাড়ি যেতে না পেরে সাততলার কার্নিশে গৃহকর্মী

সাততলার কার্নিশে আটকে পড়া গৃহকর্মী আইরিন। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৪ | ১৭:৩৯ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ | ২০:৩৬

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাঁচ নম্বর সড়কের বি-ব্লকের একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে ১৪ বছরের আইরিন। অনেকদিন ধরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করছিল তার। কিন্তু দাদি তাতে সায় দেননি। এতে অভিমান হয় তার। একপর্যায়ে ঝুঁকি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে কিশোরী। আটতলা ভবনের ছাদ থেকে কার্নিশ বেয়ে নামতে শুরু করে। তবে সাততলায় নেমেই আটকে যায়। শেষে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা অঞ্চল-৩ এর উপসহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সেখানে যায় ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। সপ্তম তলার কার্নিশে আটকে ছিল মেয়েটি। ওপরে উঠতে বা নিচে নামতে পারছিল না। পরে আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার ফাইটাররা অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে গ্রিল কেটে কৌশলে তাকে উদ্ধার করে। পরে ওই কিশোরীকে ভাটারা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জাতীয় জরুরি সেবা সূত্র জানায়, মেয়েটি কার্নিশে আটকে পড়লে একজন প্রত্যক্ষদর্শী কল করে বিষয়টি জানান। তখন কলটি রিসিভ করেন ৯৯৯ এর এএসআই লোকমান হোসেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বারিধারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এবং ভাটারা থানায় জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। পরে বারিধারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও ভাটারা থানা পুলিশের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

ফায়ার ফাইটাররা গ্রিল কেটে কৌশলে আইরিনকে উদ্ধার করেন। ছবি: সংগৃহীত

ভাটারা থানার এসআই এম এ জাহিদ জানান, ভবনের পঞ্চম তলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পারভীন আক্তারের বাসায় অনেক বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন আইরিনের দাদি। সাত বছর ধরে দাদির সঙ্গে সেখানেই ছিল মেয়েটি। সেও বাসার বিভিন্ন কাজে সহায়তা করত। পক্ষাঘাতগ্রস্ত গৃহকর্তার দেখভাল করত। ঈদের আগে সে হঠাৎ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিল কাউশী এলাকায় যেতে চায়। কিন্তু সেখানে তার পরিবারের কেউ নেই। 

তিনি আরও জানান, বাবা মাদক সংক্রান্ত একটি মামলায় কারাগারে। আর মেয়েটির ৯ মাস বয়সেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন মা। ফলে ছোটবেলা থেকেই দাদির কাছে রয়েছে আইরিন। গ্রামে তাদের বাড়িঘর বলতেও তেমন কিছু নেই। তাই সে বাড়ি যেতে চাইলে দাদি আপত্তি করেন। এতে সে অভিমান করে। ভবন থেকে নিচে নেমে পালানোর সুযোগ ছিল না। কারণ প্রধান ফটকে তালা দেওয়া থাকত। এ কারণে সে ভবনের ছাদে উঠে কার্নিশ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করছিল।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, এমন পরিস্থিতির পর আইরিনকে আর বাসায় রাখতে চাইছেন না গৃহকর্ত্রী। তাই তাকে ভাটারা থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে এনে রাখা হয়েছে। তার মাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি এলে তার মত সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

এদিকে আইরিন কোনো কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল বলে একটি সূত্র দাবি করে। তবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং উদ্ধার সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছিলেন, আত্মহত্যা করতে হলে আটতলার ছাদ থেকে নামার চেষ্টা করবে কেন? সে তো ছাদ থেকেই ঝাঁপ দিতে পারত।

আরও পড়ুন

×