অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ঔপনিবেশিক শক্তির মতো টাকা পাচারের চরিত্র এখনও অটুট

৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আত্মজৈবনিক ‘ফিরে দেখা’ বক্তৃতায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪ | ২২:৩৫
বুদ্ধিজীবী ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ঔপনিবেশিক শক্তি লুণ্ঠন করে, শোষণ করে। শোষণের মধ্য দিয়ে যা পায় সেটা পাচার করে। বাংলাদেশে বর্তমানে সে ঘটনাই ঘটছে। এখানে যারা ধনী তারা ব্যাংক লুণ্ঠন, ভূমিদস্যুতাসহ নানাভাবে বিদেশে টাকা পাচার করছে।
শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ত্রৈমাসিক পত্রিকা নতুন দিগন্তের আয়োজনে তাঁর ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আত্মজৈবনিক ‘ফিরে দেখা’ বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক আজফার চৌধুরী।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ– তিন চরিত্রের রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। তিনটি রাষ্ট্রের আকৃতি, নাম ও পতাকা ভিন্ন। তবে এই তিন রাষ্ট্রে উন্নয়নের যে ধারা, তা ভাঙেনি। সেই ধারা হলো, পুঁজিবাদী ধারা।
দীর্ঘ বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক তাঁর জীবনের নানা অংশে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন আত্মহত্যার কথা শুনি। নোয়াখালীতে কামাল উদ্দিন মজুমদার নামে একজন কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছে, ছয় পৃষ্ঠার চিঠিতে নানা কথা লিখে গেছে। ঋণের কারণে কাঁঠালগাছের সঙ্গে আত্মহত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, তবুও আমি স্বপ্ন দেখি। মানুষ স্বপ্ন দেখে কারণ, স্বপ্ন না দেখলে মানুষ বাঁচে না। তরুণদের দেখে আশাবাদী হই। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন নেই। কারণ, তারুণ্যকে সরকার ভয় পায়। যত উন্নতি হচ্ছে, তত বেকারত্ব বাড়ছে, বৈষম্য বাড়ছে। এ সবকিছুই পুঁজিবাদের লক্ষণ। আমেরিকায় আবার ট্রাম্পের মতো দুর্বৃত্ত ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। ফিলিস্তিনে শত শিশু-নারীকে হত্যা করা হচ্ছে। পুঁজিবাদ এখন শেষ প্রান্তে। এটা আশার কারণ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা। এর পর বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিরা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অন্যায়, অবিচার আর অসাম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। তিনি কোনো উপন্যাস লেখেননি, লিখেছেন প্রবন্ধ। তবে তাঁর লেখা প্রবন্ধ পড়তে শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। তিনি মানুষের মাঝের মানবিকতাকে জাগিয়ে তুলেছেন। বর্তমানে বুদ্ধিজীবীদের অনেকে দলকানা বা দলদাসে পরিণত হয়েছেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বাসদের কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, লেখক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
- বিষয় :
- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
- টাকা পাচার
- লুটপাট