বহিষ্কৃত প্রকৌশলীকে চেয়ারে বসালেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

ছবি-সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২২:৩৮
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে চেয়ারে বসিয়েছেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতার অনুসারীরা। এ ঘটনায় বিএনপির আরেক পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রধান প্রকৌশলীকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও মেয়র তাপসের আস্থাভাজন আখ্যা দিয়ে তাকে চেয়ারে বসানোর ঘটনায় নগর ভবনে বিক্ষোভ করেছে। এই সময় বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে নগর ভবনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে নগরভবন জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএসিসির নগর ভবনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে নিয়ে নগর ভবনে আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা ও মেয়র প্রার্থীর অনুসারীরা। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সদস্য মুকিতুল হাসান রঞ্জু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর সাবেক নেতা মেহেদী হাসান লিটু, শ্রমিক দলের নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্স। নগরভবনে প্রবেশকালে সামনে ছিলেন আশিকুর রহমান, এবং তার পেছনে ছিলেন বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী। এরপর আশিককে নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর রুমে যান নেতাকর্মীরা। সেখানে আশিককে একে একে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানান তারা। আশিকুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসার পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকৌশলীর রুমে যান। সেখানে প্রত্যেককে গালিগালাজ এবং হুমকি-ধমকি দেন। অনেককে আশিককে মেনে নিতে শাসাতে থাকেন। পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পাভেল শিকদার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক মো. শরিফ হোসেনের নেতৃত্বে শেখ রেহানা ও মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠ আশিকুর রহমানের চেয়ারে বসা নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো নগরভবন জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত নগর ভবনের বিভিন্ন প্রান্তে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে শোডাউন দেন।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক মো. শরিফ হোসেন বলেন, বরখাস্তকৃত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে অবৈধভাবে চেয়ারে বসানো হয়েছে। রোববার তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে শুনানি হয়েছে। কিন্তু তিনি নাকি কোর্ট থেকে একটা অর্ডার নিয়ে এসেছেন। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তিনি বহিরাগতদের নিয়ে এসে জোরপূর্বকভাবে বসেছেন। সাবেক মেয়র তাপসের সময় তিনি অনেকের চাকরি খেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এজেন্ট। মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করে এই প্রকৌশলী। তাকে বসানোর জন্য এখন বিএনপির বড় বড় নেতারা সুপারিশ করছে।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান লিটু বলেন, প্রধান প্রকৌশলী বহিষ্কারের আদেশটি আদালত কর্তৃক স্থগিত করলে তিনি আজকে নগর ভবনে আসেন। আমরা তাকে ফুল দিয়ে অভিবাদন জানানোর জন্য এসেছি। অন্য কোন ঘটনা ঘটেনি।
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসি প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আশিকুর রহমানের ঐচ্ছিক অবসরের আবেদন গ্রহণ না করে অযোগ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করে। আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্পে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক থাকাকালে দুর্নীতির আশ্রয় নেন তিনি। ওই সময় নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় ৮শ কোটি টাকা ছিল। প্রকল্প পরিচালক সেই ব্যয় প্রায় ২২শ কোটি টাকা করেন। এ ছাড়া মতিঝিল সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে অসম চুক্তি করেন। এই প্রকল্পে ৭৮ ভাগ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং মাত্র ২২ ভাগ পায় সিটি করপোরেশন। এমন অসম চুক্তি করলেও আশিকুরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একই ধরনের আরেকটি প্রকল্প সানমুন টাওয়ার নির্মাণ। এই প্রকল্পে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পায় ৭৫ ভাগ এবং করপোরেশন পায় ২৫ ভাগ। এই ঘটনায় মামলা হয় তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শিহাবউল্লাহর বিরুদ্ধে। ওই মামলায় দীর্ঘদিন জেল খাটেন প্রকল্প পরিচালক। একই ধরনের দুর্নীতি করেও মেয়র তাপসের ছায়ার কারণে রেহাই পেয়ে যান সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আশিকুর রহমান। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক থাকাকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি, চাকুরিচ্যুতসহ দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বহিষ্কৃত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান এবং ডিএসসিসির প্রশাসক ড. মহা. শের আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
- বিষয় :
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
- মেয়র তাপস