ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

নবজাতকের জন্ডিস

নবজাতকের জন্ডিস

ফাইল ছবি

 ডা. মৌসুমি আহমেদ মৌরী

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৪

নবজাতকের জন্মের পর হলদে ভাব দেখা যাওয়াকে আমরা সাধারণভাবে নবজাতকের জন্ডিস বলে থাকি। ৭০-৮০ শতাংশ নবজাতকের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তবে এদের মধ্যে ৫-১০ শতাংশ নবজাতকের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। 
জন্ডিস কেন হয়
রক্তে বিলিরুবিন নামে একটি উপাদান থাকে; যা মাত্রার অতিরিক্ত হয়ে গেলে আমরা জন্ডিস বলে থাকি। 
কারণসমূহ
নবজাতকের জন্ডিসকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি–
১. শারীরবৃত্তীয় বা স্বাভাবিক
lজন্মের পরপরই নবজাতকের লিভার/ যকৃত পূর্ণমাত্রায় কার্যক্ষমতা না হওয়ায় এটি হয়ে থাকে।
lএটি জন্মের দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয়ে ৭-১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। 
lরক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা সাধারণত ১৫ মিলিগ্রামের চাইতে বেশি হয় না। 
lশিশুর প্রস্রাব-পায়খানা স্বাভাবিক থাকে।  
২. প্যাথলজিক্যাল–
lজন্ডিস জন্মের পর প্রথম দিন থেকেই  হতে পারে এবং ভালো হতে ১৪-২১ দিন এর মতো সময় লাগে।
lগায়ে হলুদ ভাব খুব দ্রুত বাড়ে, হাত এবং পায়ের তালুতে পৌঁছে যায়। 
যেসব কারণে প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস হতে পারে:
lমায়ের রক্তের গ্রুপ (Rh-নেগেটিভ) বা (O পজিটিভ) হলে বাচ্চার জন্ডিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
lশিশুর কোনো সংক্রমণ বা ইনফেকশন হলে।
lশিশু সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করলে/জন্মের সময় ওজন যদি (২৫০০ গ্রাম-এর চাইতে)  কম হয়।
lসন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় যদি মা গর্ভজনিত ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হন।
lবাচ্চার যকৃত বা পিত্তথলিতে কোনো রোগ থাকলে।
কীভাবে বুঝবেন 
lবাচ্চাকে হলুদ লাগতে পারে, যেমন- মুখ, বুক, পেট, হাত, পা।
lপ্রস্রাব কমে যেতে পারে।
lখাওয়া-দাওয়া কম/নেতিয়ে পড়তে পারে।
lবাচ্চা বেশি অস্থির হয়ে কান্নাকাটি করতে পারে।
lসেরাম বিলিরুবিন মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে খিচুনিও হতে পারে। 
পরীক্ষা: রক্তে বিলিরুবিন নামক পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের জন্ডিসের মাত্রা নির্ণয় করা যায়। এর সঙ্গে জন্ডিসের কারণ নির্ণয়ের জন্য আরও কিছু রক্তের পরীক্ষার প্রয়োজন।
কখন সতর্ক হবেন
lজন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জন্ডিস দেখা দিলে।
l৭ দিন পর জন্ডিস ভালো না হলে।
lপ্রস্রাব কমে গেলে।
lশিশু বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিলে।
lজন্ডিস দ্রুত বাড়তে থাকলে।
lবাচ্চার জ্বর এলে।
lবাচ্চা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে বা নেতিয়ে পড়লে। 
চিকিৎসা
যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবজাতকের জন্ডিস এমনিতেই ভালো হতে পারে। চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন হয় না, কিন্তু কোন জন্ডিস নিজে থেকে ভালো হয়ে যাবে আর কোনটাতে চিকিৎসা প্রয়োজন তা বোঝার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বুকের দুধ খাওয়ানোতে নিয়মিত পায়খানা হলে জন্ডিস অনেকটাই কমে যায় শারীরবৃত্তীয় জন্ডিসের ক্ষেত্রে।
জন্ডিসের চিকিৎসা বা ফটোথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে অবশ্যই দিতে হবে, না হলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন রক্তের বিলিরুবিন মস্তিষ্কে পৌঁছে খিচুনির সৃষ্টি করতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে শিশুর স্বাভাবিক মস্তিষ্ক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
একটি ভ্রান্ত ধারণা এবং করণীয়
অনেকেই মনে করেন রোদে নিলেই বাচ্চার জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে, কিন্তু দীর্ঘ সময় রোদে দেওয়ার কারণে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে বা বাচ্চা পানিশূন্যতায় পড়তে পারে। তাই জন্ডিস মনে হলে শিশু বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছে–এটি নিশ্চিত করতে হবে এবং অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে v
    
[শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার]

আরও পড়ুন

×