ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ব্যবসায়ীদের মত

ভারতের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়বে চাল আমদানি

ভারতের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়বে চাল আমদানি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৪:১৭

ভারত চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করায় বিপাকে পড়বে বাংলাদেশের আমদানি। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে ভারত থেকে আমদানি খরচ বাড়বে। আবার অন্যান্য দেশের বাজারেও চালের দাম বেড়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশের সরকার শুল্ক কমিয়ে আমদানির মাধ্যমে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর যে চেষ্টা করছে, এর সফলতা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক্ক আরোপ করেছে। একই সঙ্গে ভাঙা চাল বা খুদ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে; যা গত শুক্রবার কার্যকর হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় গড় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভারতের ধান উৎপাদনকারী প্রধান প্রধান রাজ্যে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করে নিজেদের মজুত বাড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে চালের দাম বেড়েছে বলে গতকাল শনিবার রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে। ভারতের সিদ্ধান্তের এক দিন পরই মিয়ানমারে প্রতি টন চালের দাম ৫০ ডলার বেড়েছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও দাম বেড়েছে। এমনকি বৈশ্বিক বাজারে গম ও ভুট্টার দামও কিছুটা চড়েছে। বিশ্ববাজারের ৪০ শতাংশ চাল আসে ভারত থেকে। বৃহস্পতিবার ভারত যেসব ধরনের চালের ওপর শুল্ক্ক আরোপ করেছে, সেগুলো দেশটির মোট রপ্তানিযোগ্য চালের ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম বেড়েছে। আমনের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ টন আতপ চাল। সরকার নিজেও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের চাল আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত। কারণ, পার্শ্ববর্তী এ দেশ থেকে সড়কপথে দ্রুত দেশে চাল আনা যায়। পরিবহন খরচও কম। আবার বাংলাদেশের বাজারে ভারতের চালের চাহিদাও রয়েছে। রপ্তানিতে শুল্ক্ক আরোপ করায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় চাল রপ্তানিকারক দেশের এ সিদ্ধান্তের ফলে অন্যান্য দেশেও দাম বাড়বে। যা সামগ্রিকভাবে চাল আমদানিতে বিপাকে ফেলবে বাংলাদেশকে।

ইতোমধ্যে সরকার ভারত থেকে জিটুজি ভিত্তিতে আমদানির জন্য চুক্তি করেছে। আবার বেসরকারি খাতের অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে আতপ চাল আমদানির এলসি খুলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই এলসির কিছু চাল দেশে এসেছে, কিছু চাল ভারতের বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে, কিছু চাল বন্দরে আসার পথে। এসব চালে ভারত সরকার ঘোষিত শুল্ক্ক আরোপ হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিষয়টি পরিস্কার নয়। ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৃহস্পতিবার। যে কারণে এ সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর হবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। আজ রোববার এ বিষয়ে জানা যাবে।

বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটওয়ারি সমকালকে বলেন, ভারত আতপ চালে শুল্ক্ক আরোপ করেছে। এতে আতপ চাল আমদানির খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি অন্যান্য চালের দামও বেড়ে যাবে। অন্য দেশেও দাম বাড়বে। তিনি বলেন, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং সিলেট এলাকায় মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি আতপ চাল। অন্যান্য এলাকায়ও আতপ চালের চাহিদা বাড়ছে। কারণ এর দাম কম। তিনি জানান, সরকার আমদানিতে শুল্ক্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের পর যে পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে, এর বেশিরভাগই আতপ চাল।

একই সংগঠনের উপদেষ্টা ও ঠাকুরগাঁও চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, ভারতের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। আমদানি নিরুৎসাহিত হবে, দামও বাড়বে।

বাজারে চাল বিপণন করে এমন এক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তে চালের আমদানি নিরুৎসাহিত হবে। চালের দামও বেড়ে যাবে। কারণ, ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে বড় সরবরাহকারী।

আরও পড়ুন

×