ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

‘জ্বালানিতে আরও এক বছর ভর্তুকি দরকার’

‘জ্বালানিতে আরও এক বছর ভর্তুকি দরকার’

চেম্বার ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এমসিসিআইয়ের মতবিনিময় সভা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৩:৪৬ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬:২১

জ্বালানি খাতে আরও এক বছর ভর্তুকি বহাল রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। একই সঙ্গে ট্রেড লাইসেন্সের সময়সীমা এক বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করার আহ্বান জানানো হয়।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব অনুরোধ করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, মহাসচিব ফারুক আহমদ প্রমুখ।

এমসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মহামারি এখনও শেষ হয়নি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধও চলমান। রয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপ। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে সরকার কয়েকটি খাতে ভর্তুকি কমাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি না নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। জ্বালানির দাম সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানিতে ভর্তুকি তুলে নিলে চাপে পড়বে ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে কমে যাবে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা। তাই জ্বালানি খাতে অন্তত আরও এক বছর ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, আগামী চার বছর পর যখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে, তখন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা হারাতে হবে। ইচ্ছা করলেও ভর্তুকি দিয়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা যাবে না। আর টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে সহায়তা দিতে হবে।’

সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এমসিসিআই সভাপতি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর থেকে দেশে ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু ডলারের সংকটের কারণে আগের মত ব্যাংকগুলো জরুরি মুহূর্তে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছে না। কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে এখনও অনেক সময় লাগছে। এতে নতুন সংকট দেখা দিতে পারে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তাদের হাতে ব্যবসায়ীদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য সরকার ও এনবিআরের মুখে মুখে যে স্বদিচ্ছা রয়েছে, তা মাঠ পর্যায়ে থাকে না। রাজস্ব খাতে হয়রানি দূর করতে অটোমেশন চালু করার জন্য ব্যবসায়ীরা বারবার তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের এ দাবি এখনও চালু হয়নি। তাই ব্যবসা ক্ষেত্রে এনবিআরে ভোগান্তি কমেনি।

রপ্তানি আয় বাড়বে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবং সরকার সহায়তা দিলে এবার রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে রপ্তানি খাতে রাজস্ব বাড়াচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। প্রতি মাসে গড়ে ৪ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে শুধু তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে রপ্তানি বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে।

এ সময় সুশাসনের প্রতি জোর দিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে হলে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স পেতে নানা ভোগান্তিতে পড়েন। বিশ্বের কোথাও প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে করতে হয়। এটি হয়রানিমূলক। ট্রেড লাইসেন্সের নবায়নের সময়সীমা অন্তত পাঁচ বছর করা উচিত।’

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের বিষয়ে এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ‘এমসিসিআই ঋণ খেলাপিদের পক্ষে নয়। খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যায়, সেই ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এমসিসিআই বহুবার আলোচনা করেছে। খেলাপি ঋণের মওকুফ চায় না এমসিসিআই।’

আরও পড়ুন

×