গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া মুনাফা করছে: ক্যাব

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩ | ১৫:২৫ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ | ১৫:২৫
নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। এসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না। কারণ ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলো সক্ষমতা সীমিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বড় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নজিরও দেখা যায় না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
বাজারকে ‘আগুন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন থামাবে কে? এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজছি। পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। এরপরও দেশে উৎপাদিত এবং আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙ্গে ও ধার করে পণ্য ক্রয় করছে। অনেক চাহিদাই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
গোলাম রহমান বলেন, গত বছরের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। পরে সংশোধিত বাজেটে কিছুটা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এর কয়েক দিনের মধ্যে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেখা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মুদ্রানীতি ছিল ৯ দশমিত ০২ শতাংশ, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে টিসিবির বাজার দর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত এক বছরে অনেক পণ্যের দাম ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে মুদ্রাস্ফীতির সঠিক চিত্র দেখানো হয় না।
তিনি বলেন, পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে সরকার ও ব্যবসায়ীরা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহে ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা অযুহাত দিচ্ছেন। কিন্তু এসব ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তাদের জীবনমানের অবক্ষয় হচ্ছে। মূলত সরকারের ব্যর্থতার কারণে পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ছে।
ক্যাবের সভাপতি বলেন, সারা বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ উদ্যোগ নেয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধিকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হিসাবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে আমানতের সুদহার ৬ এবং ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুদ হার সংশোধন না করে, জেদিভাবে তা অনুসরণ করছে। বাজেট ঘাটতি মিটাতে সরকার গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক লাখ এক হাজার কোটিরও বেশি টাকা ঋণ নিয়েছে। টাকশালে টাকা ছাপিয়ে এই ঋণ দেয়া হয়েছে। এতে অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ পাঁচ গুণ, অর্থাৎ ৫ লাখ কোটি টাকা বেড়েছে। ফলে অর্থ সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে। এছাড়া বারবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতকে উসকে দিয়েছে। এ কারণে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দর পতনের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
ক্যাব সভাপতি বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও দাম নির্ধারণ করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। কখনও ভোজ্যতেল, কখনো চিনি অথবা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। তাই ব্যবসাবান্ধব নয় ভোক্তাবান্ধব নীতি অনুসরন করতে হবে সরকারকে।
নায্যমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ, ভোক্তা-স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকির জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ের দাবি করেন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রণালয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয় এবং সেখানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়। তাই ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয় দরকার।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে ভোক্তাদের শোষণ করা হচ্ছে। দেশের ৬ থেকে ৭টি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের কারণে কিছুদিন পর পর পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছে মত দাম বাড়াচ্ছে তারা।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠাকালীন মহা-পরিচালক ও ক্যাব সদস্য মো. আবুল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক ও ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শামস এ খান প্রমুখ।