সরকারকে ঋণ দিয়েই আয় সাত হাজার কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। পরিচালন ব্যয় বাদে নিট মুনাফা হয়েছে ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছর শুধু সরকারকে ঋণ দিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আয় হয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। রেপো, স্পেশাল রেপোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া স্বল্পমেয়াদি ধারের বিপরীতে এসেছে দুই হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রিসহ অন্যান্য উপায়ে এসেছে ছয় হাজার কোটি টাকা। এবারের এ মুনাফা গত অর্থবছরের প্রায় দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার রেকর্ড এক লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সরবরাহ করে ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ঋণ সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এমনিতেই এখন ১০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদরা। অবশ্য চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ সরবরাহ কমিয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার চরম সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছর বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে এক হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করে। আগের অর্থবছর বিক্রি করে ৭৬২ কোটি ডলার। আবার এ সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দর অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খাত থেকে আয় হয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। অবশ্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক কমে এখন ২৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক নিট মুনাফা করে ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরে মুনাফা বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা বা ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই অর্থবছরের মুনাফার মধ্যে বৈদেশিক খাত থেকে আসে ২ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। আর সরকারকে ঋণ, রোপো ও স্পেশাল রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে স্বল্প মেয়াদি ধারের বিপরীতে মুনাফা হয় ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আয় করে ৬ হাজার ২৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গতকালের বৈঠকে আর্থিক সেবা শুরুর আগেই নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির লাইসেন্স সমার্পনের আবেদনের বিষয়টি আলোচনা হয়। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা নগদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খানের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা যে ব্যধবাতকতা ছিল, তা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি মূল্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগে ব্লুমবার্গের টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়টি এজেন্টাভুক্ত থাকলেও আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
বৈঠক থেকে গত কয়েকবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অনুকূলে পুনঃঅর্থসংস্থান বাবদ ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়। নগদ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণে পদ্মা ব্যাংকের ওপর আরোপিত দণ্ড সুদ পরিশোধে বাড়তি সময় চাওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।
- বিষয় :
- ঋণ
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- নিট মুনাফা