এলএনজি আমদানি নিয়ে নানা প্রশ্ন আইএমএফের

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:২১ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:২১
এলএনজি আমদানিতে সরকারের লোকসান সমন্বয়ের পরিকল্পনাসহ জ্বালানি খাতের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পেট্রোবাংলা ও বিপিসির কাছে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের ফর্মুলাভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ পদ্ধতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কেও খোঁজখবর নিয়েছে ঋণদানকারী ব্যাংকটি।
ঢাকায় সফররত আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি। বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মূল্য কাঠামো এবং ভবিষ্যতে দাম সমন্বয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিপিসির কাছে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের চাহিদা এবং আমদানি নিয়ে প্রক্ষেপ, চলতি বছরের মধ্যে দাম সমন্বয়ের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের ফলে মূল্যবৃদ্ধি করা হলে তার প্রভাব এবং ক্ষতিপূরণে পদক্ষেপের বিষয়েও জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দলটি।
সূত্রমতে, জ্বালানি তেলের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ফর্মুলাভিত্তিক তেলের দাম নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের কাছে একটি ‘প্রেজেন্টেশন’ দেয় বিপিসি। আইএমএফকে জানানো হয়, তেলের মূল্য সমন্বয় নিয়ে কাজ চলছে। বাস্তবায়ন করতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে।
সূত্র জানায়, লভ্যাংশ, উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি খাত মিলে জ্বালানি তেলে প্রায় ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে দাম হিসাব করে একটি খসড়া ফর্মুলা জ্বালানি বিভাগে জমা দিয়েছে বিপিসি। তিন মাস অথবা এক মাস পর পর দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। প্রস্তাবটি জ্বালানি বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিপিসির ওই ফর্মুলা কার্যকর করলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০-১৫ টাকা বাড়াতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে জনপ্রিয়তা নষ্ট করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না সরকার। তাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি কার্যকরের জন্য আরও সময় নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের সঙ্গেও বৈঠক করেছে আইএমএফ। সেখানে বিদেশ থেকে বেশি দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে কম দামে বিক্রির ফলে সরকারের আর্থিক লোকসান কীভাবে সমন্বয় করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্যাসের মজুত, উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি এবং এ খাতে ভর্তুকির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়, বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে গ্যাসের বাড়তি দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। সরকার, গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর মুনাফা এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে এটি মেটানো হচ্ছে। এর পরও যে ঘাটতি থাকছে, তা পূরণ করা হচ্ছে আইটিএফসি থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ দিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাসের দাম না বাড়ালে এভাবে ভর্তুকি দিয়ে যেতে হবে।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
গত অক্টোবরেও জ্বালানি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল আইএমএফ প্রতিনিধি দল। তখন ঋণ ছাড়ের শর্ত হিসেবে আগামী ডিসেম্বর থেকেই পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করার কথা বলেছিল তারা।