ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী বেতনে যাবে ৪২, ৮২২ কোটি, ভাতায় ৪০,১৬৮ কোটি

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী বেতনে যাবে ৪২, ৮২২ কোটি, ভাতায় ৪০,১৬৮ কোটি

প্রতীকী ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪ | ২০:৫৮ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ | ২১:০২

২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ মোট কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বেতন ৪২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। আর ভাতা ৪০ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। 

সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে চালু করা হবে। নতুন বাজেট প্রস্তাবে কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ও বদলি এবং বৈদেশিক ভ্রমণ ও বদলি খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ ৪৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহে (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনা) বরাদ্দ গত বছরের চেয়ে কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ১৪৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আগামী অর্থবছরের জন্য মাত্র ১০৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে যাচ্ছে। চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ খাতেও চলতি অর্থ বছরের ৬৭৯৩ কোটি টাকার স্থলে ৫১৭১ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়।

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সম্মানী ও বিশেষ ব্যয়ও কমানো হয়েছে। তা প্রায় তিনভাগের একভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে ১৪৪৯ কোটি টাকা থাকলেও ২৪–২৫ অর্থবছরে মাত্র ৬৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট।  

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৮ বছর বয়সের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এ কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, পেনশন সুবিধা পান এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের আমরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসব। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এরই মধ্যে এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্যও আমরা এ ব্যবস্থা চালু করব। 

অর্থমন্ত্রী বলেন, সব অবসরভোগী সরকারি কর্মচারী ইএফটির মাধ্যমে মাসের শুরুতেই পেনশন পাচ্ছেন। পেনশনারদের জন্য পাইলট ভিত্তিতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে জীবিতাবস্থা যাচাইকরণ চালু করা হয়েছে। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে এ বাজেট বিদায়ী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অংকে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার একটি জবাবদিহিমূলক, জ্ঞানভিত্তিক, কল্যাণমুখী, উপাত্তনির্ভর, স্বয়ংক্রিয় এবং সমন্বিত দক্ষ স্মার্ট প্রশাসন গড়ার মাধ্যমে জনগণকে উন্নত ও মানসম্মত সেবা প্রদান এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আমরা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত, দেশপ্রেমিক, ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে ব্যয় হবে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা বেশি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে জনসেবামূলক আচরণ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং তাদের বস্তুনিষ্ঠ কর্মমূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×