এজেন্ট নেই, সেবা অপ্রতুল, তারপরও ভাতা বিতরণে চাই ‘উপায়’

ছবি-সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪ | ১৯:৪৪ | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ | ১৯:৪৯
দেশব্যাপী সেবা নেই। নেই চেনা-পরিচয় এবং প্রচারণাও। তারপরও বিশেষ একটি মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রান্তিক পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য ভাতা বিতরণের দায়িত্ব দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন বিশেষ কিছু গোষ্ঠী।
ভাতা বিতরণের দায়িত্বে থাকা খোদ সমাজসেবা অধিদপ্তরও এ বিষয়ে নাখোশ। কিন্তু তাদেরকে পাশ কাটিয়ে পিছিয়ে পড়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘উপায়’কে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণের দায়িত্বে যুক্ত করতে চাইছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অভিমত এবং ‘উপায়’র পরিস্থিতি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। কিন্তু সেটিকেও আমলে না নিয়ে ‘উপায়’কে কাজ দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে ‘উপায়’কে কাজ দিতে চাইছেন। আর তার জন্যে তিনি আমলে নিচ্ছেন না সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওই রিপোর্টকে।
বর্তমানে বড় দুই মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর ‘বিকাশ’ এবং নগদ প্রায় এক কোটি মানুষকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। সূত্র বলছে, এই তালিকায় ‘উপায়’কেও যুক্ত করতে চান মন্ত্রী।
অথচ সারাদেশে ‘বিকাশ’র সাড়ে তিন লাখের বেশি এজেন্ট আছে। ‘নগদ’রও এজেন্ট সংখ্যা তিন লাখ ২০ হাজার। সেখানে ‘উপায়’র সারাদেশে এজেন্ট সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজার। অথচ এই ‘উপায়’কেই কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এত তোড়জোড় দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন।
মন্ত্রণালয়ের এই চেষ্টার প্রবল বিরোধিতা করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। উপায়ের যথেষ্ট পরিমাণে এজেন্ট না থাকায় ভাতাভোগীরা টাকা উত্তোলনে বিড়ম্বনায় পড়বেন এমন আশঙ্কা করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। তারা এই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
বর্তমানে ৯০ লাখের কিছু বেশী মানুষ বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমান ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে ‘বিকাশ’ ও ‘নগদ’র বিতরণ এলাকা হিসেবে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠান যে এলাকার দায়িত্বে থাকে, সেখানে পুরো ভাতাই সেই প্রতিষ্ঠান এককভাবে বিতরণ করে। ফলে এ অবস্থায় ‘উপায়’কে কোনো এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হলে সেখানে ভাতাভোগীরা টাকা উত্তোলনে সমস্যায় পড়বেন বলে অধিদপ্তর মনে করে।
২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে দেশের শীর্ষ দুটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে এই ভাতা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে এ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। তার আগে মূলত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে টাকা বিতরণ করা হতো। তাতে প্রায়ই সুবিধাভোগীদের অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হওয়ার কথা শোনা যেত।
কিন্তু ‘বিকাশ’-‘নগদ’ দায়িত্ব পাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায় বলে জানান সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সংস্থা দুটি সফলতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করলেও সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে এখানে উপায়কেও সংযুক্ত করার জন্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়।
মন্ত্রণালয়ের এই অনুরোধের পর গত বছরের শেষ দিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর ‘উপায়’র নানা সুযোগ সুবিধা বিশ্লেষণ করে দেখে। তারা যাচাই করতে গিয়ে দেখে, বাজারে নতুন আসা ‘উপায়’র পর্যাপ্ত এজেন্টই নেই। ফলে তাদের যে এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানে ভাতাভোগীরা ভাতা উত্তোলনে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়বেন। সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে চিঠিও লেখে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
যেহেতু এজেন্ট সংখ্যা কম, তাই তাদের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না বলেই মনে করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সুবিধাভোগীদের অধিকাংশ বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তজন। ‘উপায়’র মাধ্যমে ভাতা পেতে হলে তাদের ভোগান্তি কমবে না, বরং বাড়বে। বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই মন্ত্রণালয় বোঝার চেষ্টা করছে না বলে জানান সামাজসেবা অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালও মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন।
এর আগে এমনই এক অপারেটরকে প্রাথমিকের শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে জটিলতায় পড়েছিল সরকার। তখন ‘শিউর ক্যাশ’ দায়িত্ব পেলেও দেশেব্যাপী তাদের এজেন্ট ছিল না। ফলে কোনো রকমে অ্যাকাউন্ট খোলার পর মোবাইলে টাকা আসলেও এজেন্টের অপ্রতুলতায় সেই টাকা তুলতে পারতো না সুবিধাভোগীরা। এক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা সমাজসেবা অধিদপ্তরের।
এ বিষয়ে শীর্ষ একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদানের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের চুক্তি এখনও কয়েক বছর বাকি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী নতুন ভাতাভোগী যুক্ত হলেও বর্তমান দুটি এমএফএস-ই দায়িত্ব পাবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এর মধ্যে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে চাচ্ছে। যা আমাদের দৃষ্টিতে চুক্তির ব্যত্যয়।