বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠকে বায়ার্স ফোরামের আশ্বাস
রপ্তানি আদেশের সব পণ্য নেওয়া হবে

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেন।
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪ | ২০:৫৭
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরাম। ইন্টারনেট সেবা এখনও পুরোপুরি সচল না হওয়ায় বাণিজ্য যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ফোরামের প্রতিনিধিরা। এ কারণে রপ্তানি আদেশের পণ্য সময়মত হাতে পাওয়ার বিষয়ে অস্বস্তিতে আছেন তারা। তবে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তারা। কোনো রপ্তানি আদেশ বাতিল না করা, চুক্তির চেয়ে কম মূল্য পরিশোধ কিংবা পণ্যমূল্য পরিশোধে দেরি না করা ও আকাশ পথে পণ্য পৌছাতে কোনোও রকম চাপ না দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন তারা।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে সোমবার এক বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এইচ অ্যান্ড এম, মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সার, নেক্সট, ওভিএসসহ ১০টি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে চার-পাঁচদিন কারখানা বন্ধ থাকার কারণে যেসব পণ্য সময় মত রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো নিতে তারা সম্মত। তারা আশ্বস্ত করেছেন, কোনো রপ্তানি আদেশ বাতিল হবে না। কম দেওয়া হবে না পণ্যের মূল্য। এমনকি এয়ারে বা আকাশ পথে পণ্য পৌঁছানোর জন্য কোনও চাপ দেওয়া হবে না। দেশে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি সচল করাসহ নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে কারখানাগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকার জন্য ক্রেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অপ্রত্যাশিত বিলম্বের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর ওপর যেন বাড়তি কোনো চাপ তৈরি না হয়, সে বিষয়ে ক্রেতাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ ক্রেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, শিল্পের গতি দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে সরকার পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বিজিএমইএ।
শিল্পের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখতে এবং সরবরাহ চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলা ধরা হয় বৈঠকে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংকট শুরুর প্রথম দিন থেকেই পোশাক শিল্পে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরে সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুততম সময়ে কারখানা খুলে দেওয়া, ইন্টারনেট সেবা চালু ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ শিল্পের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় কারখানাগুলো খুলে দেওয়া গেছে, শুরু হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রমও।
বৈঠকে বিজিএমইএ জানায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর সীমিত পরিসরে হলেও ইন্টারনেট পুনরায় চালু করা হয়েছে। এছাড়া নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বন্দর পরিষেবাগুলোকে দ্রুততর করার অনুরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা যেন বন্দরে কোনো সমস্যায় না পড়েন সে দাবি জানিয়েছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এতে পোশাক রপ্তানিকারকদের বিলম্বজনিত ডেমারেজ চার্জ আদায় না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসার পরিবেশ স্বাভাবিক করা, শিল্পে গতি ফিরিয়ে আনা ও বন্দর কার্যক্রমে যেন কোনো ধীরগতি বা জটলা না হয়, সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের কর্মতৎপরতার বিষয়গুলোও ক্রেতা প্রতিনিধির সামনে তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দীপু, আব্দুল্লাহিল রাকিব, রকিবুল আলম, পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন, শোভন ইসলাম, ইমরান আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
- বিষয় :
- তৈরি পোশাক
- বিজিএমইএ