ব্যাংকপাড়ায় আতঙ্ক, গ্রাহক উপস্থিতি কম

ছবি-সংগৃহীত
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪ | ০২:১৯
চলমান অসহযোগ আন্দোলনে রোববার দিনভর সারাদেশে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাংকপাড়া এদিন ছিল প্রায় ফাঁকা। সকালের দিকে টাকা উত্তোলনের জন্য কিছু গ্রাহক শাখায় এলেও দুপুর ১২টার পর অধিকাংশ শাখা ছিল প্রায় গ্রাহকশূন্য। অনেক এটিএম বুথ ছিল বন্ধ। আবার খোলা থাকলেও অনেক ব্যাংক টাকা উত্তোলনের সীমা কমিয়ে দেওয়ায় চাহিদামতো টাকা তোলা যায়নি। এর মধ্যে আজ থেকে আবার তিন দিনের সাধারণ ছুটির কারণে বন্ধ থাকবে ব্যাংক।
ব্যাংকাররা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে জুলাইয়ের শেষ ১৫ দিন স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম তেমন করা যায়নি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনলাইন লেনদেনও হয়নি। যে কারণে ইন্টারনেটের বাইরে বিকল্প লেনদেন বিষয়ে ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারণ ছুটি ও সীমিত লেনদেনের কারণে গত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে। আমদানি, রপ্তানি, ঋণসহ বেশির কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় অনেকে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কারফিউ শিথিলতা বাড়িয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার স্বাভাবিক লেনদেন হলেও আজ থেকে আবার টানা তিন দিন বন্ধ থাকছে। ফলে লেনদেন নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির পর সাধারণত রোববার এটিএম বুথে টাকা ঢোকানো হয়। চলমান পরিস্থিতির কারণে গতকাল সেটা সম্ভব হয়নি। আজ থেকে আবার তিন দিন বন্ধ থাকায় এটিএম বুথে চাহিদামতো টাকা না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা, প্রতিটি বুথে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাসের শেষ কিংবা শুরুতে বেতন-ভাতা অ্যাকাউন্টে আসে। আবার পেনশনসহ বিভিন্ন ভাতা ঢোকে এ সময়ে। ফলে টাকা উত্তোলন, অন্যকে পাঠানোর চাপ বেশি থাকে। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক বন্ধের পর গতকাল চাপ থাকার কথা ছিল। তবে আতঙ্কের কারণে গ্রাহক উপস্থিতি ছিল খুব কম। বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রধান ফটক বন্ধ করে লেনদেন হয়। আবার সপ্তাহের প্রথম দিন অনেক এটিএম বুথে টাকা ফিডিং করতে না পারায় সেখানেও টাকার স্বল্পতা ছিল। অবশ্য এক বুথে টাকা না পেয়ে আরেক বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ব্যাংক বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চাহিদামতো টাকা তুলতে পারেননি কেউ কেউ।
দুপুর ১টার দিকে ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিলে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক এটিএম বুথের দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে। নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো পাশে এক সারিতে পাঁচটি ব্যাংকের বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ইউসিবি ছাড়া বাকি চারটি বন্ধ পাওয়া যায়। নিরাপত্তা প্রহরীরা জানান, হামলা হতে পারে– এ রকম আতঙ্কে এসব এটিএম বুথ বন্ধ রাখা হয়েছে।
কয়েকটি বুথ ঘুরে টাকা তুলতে পেরেছেন বেসরকারি চাকরীজীবী মেহেদি হাসান। তিনি সমকালকে বলেন, অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে একবারে ২০ হাজার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে ৫ হাজার টাকা করে চারবারে উত্তোলন করতে পেরেছি।
অন্য এক গ্রাহক মো. সাইফুল্লাহ জানান, তিনি নিজ ব্যাংকের কার্ড দিয়ে বুথ থেকে একবারে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বুথের দায়িত্বে থাকা নিরপত্তা প্রহরীর পরামর্শে ৩০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন। পরে কয়েকবার চেষ্টা করেও আর টাকা তুলতে পারেননি।