ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ছয় বছরেও কার্যক্রমে আসেনি সিসিবিএল

ছয় বছরেও কার্যক্রমে আসেনি সিসিবিএল

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৬

প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও কার্যক্রমে আসতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জের লেনদেন নিষ্পত্তিকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল)। আগামী দুই বছরেও পারবে কিনা, সন্দেহ। কারণ এতটা দীর্ঘ সময়েও প্রযুক্তি অবকাঠামো স্থাপনে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ক্রয়ের আদেশই চূড়ান্ত করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এখন ক্রয়াদেশ দেওয়া হলে, তার সরবরাহ পাওয়া থেকে পুরোপুরি কার্যক্রমে আসতে আরও অন্তত দুই বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে সফটওয়্যার পেতেই সময় যাবে ১৬ মাস। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে সিসিবিএল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে বিএসইসির আইন করে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। এর ৪৫ শতাংশ মালিকানা ডিএসইর, সিএসইর ২০ শতাংশ, সিডিবিএলের ২০ শতাংশ এবং বাকি ১৫ শতাংশ ১২ ব্যাংকের।
জানা গেছে, মৌলিক অবকাঠামো স্থাপনের লক্ষ্যে ১ কোটি ১০ লাখ ডলারে ভারতীয় টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেসের কাছ থেকে সফটওয়্যার কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মূল সফটওয়্যারের মূল্য পড়ছে ৬০ লাখ ডলার। আর প্রতিবছর ৫ লাখ ডলার করে ১০ বছর রক্ষণাবেক্ষণে মোট ব্যয় ৫০ লাখ ডলার। তবে এখনও ক্রয় চুক্তি হয়নি।
এদিকে ক্রয় চুক্তি করতে চাওয়ার আগমুহূর্তে সিসিবিএলের প্রধান শেয়ারহোল্ডার ডিএসইর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিলম্বের পাশাপাশি নানা অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। চিঠিতে ক্রয় স্থগিতের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তবে ক্রয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ অস্বীকার করছে সিসিবিএল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে এ ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। বিদেশি সাত প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখালেও চারটি দরপত্র জমা দেয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় দুবাইভিত্তিক ইনফেলিক্স মিডেল-ইস্ট এবং লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাধীন শ্রীলঙ্কাভিত্তিক কোম্পানি এলএসইজি বাদ পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে বাদ পড়ে নিউইয়র্কভিত্তিক নাসডাক স্টক এক্সচেঞ্জের সহযোগী। সব কিছুতে যোগ্য হওয়ায় শুধু টাটার দর প্রস্তাব গ্রহণ করে সিসিবিএল।
কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সফটওয়্যার ও কয়েকজন জনবল দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন নিষ্পত্তি গত ২০ বছর ধরে সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে, সেখানে ১৩৫ কোটি টাকায় শুধু সফটওয়্যার ক্রয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিবিএ। তাদের অভিযোগ, এ ক্রয়মূল্য বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি। তা ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য সিসিবিএল গঠন হলেও ডিএসইর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ তুলে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, কার্যক্রম শুরু করতে আট বছর লাগলে সিসিবিএল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন কী।
ব্রোকারদের আরও অভিযোগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক দুই চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন এবং শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জোর করে এ প্রতিষ্ঠান চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। এ প্রতিষ্ঠানের কাজের ৯৮ শতাংশ আসবে ডিএসই থেকে। তবে মালিকানা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর ডেটা সেন্টার স্থাপনে যন্ত্রপাতি কেনা হলেও স্থাপন হয়নি। নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে বিশাল অফিস নিয়ে থাকলেও বাস্তবে এর কোনো কাজ নেই।
নানা সমালোচনার জবাবে সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ আহমেদ জানান, প্রথমত বিলম্বের দায় সিসিবিএলের নয়। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও আইন অনুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন দিতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ৫৩৫ দিন সময় নিয়েছে। এর পরও ৪২০ দিন বিলম্ব আছে, যার ৩০২ দিন ছিল ডিএসই মনোনীত শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের কারণে। ক্রয়ে সব ধরনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ডিএসই পরিচালকদের অনুরোধে সরকারি কেন্দ্রীয় ক্রয় ব্যবস্থাপনার অধীনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র মূল্যায়নে ডিএসই, সিএসইর এমডিসহ অতিরিক্ত ছয়জনকে নেওয়া হয়।
সিসিবিএলের এমডি সমকালকে বলেন, অভিযোগ করা হচ্ছে, ডিএসইর সঙ্গে আলোচনা না করে সফটওয়্যার কেনা হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সিসিবিএলের পর্ষদে একমাত্র ডিএসইর দু’জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক আছেন। সব সিদ্ধান্ত তাদের উপস্থিতিতে হয়েছে। আর বেশি মূল্যে সফটওয়্যার কেনার অভিযোগও সত্য নয়।
সম্প্রতি ডিএসইর পক্ষ থেকে অবিলম্বে সব ধরনের ক্রয় কার্যক্রম স্থগিত করে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ফরহাদ আহমেদ জানান, ফিরতি চিঠিতে সিসিবিএল পর্ষদ উত্থাপিত সব অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ জানান, তিনি শুনেছেন, এ সফটওয়্যারের সঙ্গে ডিএসইর লেনদেন সফটওয়্যারের ‘ম্যাচ’ হবে না। সিসিবিএলের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ নয়, স্টক এক্সচেঞ্জের জন্যই সিসিবিএল। ডিএসইর সঙ্গে ম্যাচ করে তাদের সফটওয়্যার নেওয়া উচিত ছিল।
এ সমালোচনার জবাবে সিসিবিএলের কর্মকর্তারা বলেন,  বড় সফটওয়্যার ম্যাচ না করাই স্বাভাবিক। এ জন্য এপিআই নিতে হবে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সিডিবিএলের সফটওয়্যার আলাদা। ফলে মিলবে এমন কথা নেই। এপিআই দিয়েই এ প্রযুক্তিগত সমস্যা দূর করা হয়।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানান, সিসিবিএলের গঠন নিয়ে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ নেতারা আপত্তি তুলেছেন। তাদের আপত্তি ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এটা ঠিক, সিসিবিএলে ডিএসইর মনোনীত পরিচালক ছিলেন। তবে তাদের এ বিষয়ে জানাবোঝা ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর এতদিন বসে না থেকে সিসিবিএল চাইলে দু-তিন বছর ডিএসইর ব্যবস্থা নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারত। কেন করেনি, এটা বড় প্রশ্ন। এখন ডিএসইর পক্ষ থেকে পুরো বিষয় পর্যালোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজারের স্বার্থে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে ডিএসই মন্তব্য তাঁর।

আরও পড়ুন

×