ভর্তুকির পাঁচ হাজার কোটি টাকা চায় পেট্রোবাংলা

ফাইল ছবি
মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:০৬
এলএনজি আমদানি বাবদ গত নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধের পাশাপাশি ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দায় মেটাতে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বা সরকারি অনুদান হিসেবে চেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা। সম্প্রতি এ অর্থ দ্রুত ছাড় করার অনুরোধ করে সংস্থাটির পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। বকেয়া যথাসময়ে পরিশোধ না হলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়, এলএনজি আমদানির বিপরীতে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি পাওয়া গিয়েছিল। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও একই পরিমাণ ভর্তুকি বিবেচনায় ক্রয় পরিকল্পনা করা হয়, যার বিপরীতে অর্থ বিভাগ এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে, যা ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানি মূল্য পরিশোধে ব্যয় হয়ে গেছে।
চিঠিতে জানানো হয়, এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা পূরণ ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়ে পেট্রোবাংলা। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের মূল্য প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়ানোর পরও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ওই দুই বছরের ঘাটতি মেটাতে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সরকারি অনুদান বা ভর্তুকি, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণ এবং আওতাধীন কোম্পানিগুলোর ‘রিটেইন আর্নিংস’ থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করা হয়।
চলতি অর্থবছরে গত নভেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির মূল্য বাবদ ২৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে নেওয়া ঋণের ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, অর্থাৎ ১০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। এসব দেনার বিপরীতে পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত সময়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও স্পট মার্কেট থেকে আরও ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। আগের ৩ হাজারসহ ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত এলএনজি ক্রয় বাবদ খরচ ও বিক্রয় বাবদ আয়ের মধ্যে সম্ভাব্য ঘাটতি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
চিঠিতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ে মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সরবরাহকারীরা এলএনজি দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে সুদ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হবে। এলএনজি পেট্রোবাংলার সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) সই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপত্রে অংশ নেওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। সার্বিক বিবেচনায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলএনজি সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য পেট্রোবাংলাকে সরকারি অনুদান বা ভর্তুকি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্য থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে অর্থ ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনাধীন। তবে চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা পুরো অর্থ হয়তো এখন ছাড় করা সম্ভব হবে না।
- বিষয় :
- পেট্রোবাংলা