ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সুপারিশ

দুর্নীতির জব্দ করা অর্থ-সম্পদ বাজেটে ব্যয় করলে চমক হবে

দুর্নীতির জব্দ করা অর্থ-সম্পদ বাজেটে ব্যয় করলে চমক হবে

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ | ২২:০৮

অত্যাচার, চুরি, দুর্নীতি বা করখেলাপির মাধ্যমে যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন, তাদের টাকা ও সম্পদ জব্দ করে বাজেট অর্থায়নে বিকল্প উৎস সৃষ্টির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এটি করতে পারলে এবারের বাজেটের বড় চমক হবে। নৈতিক অর্থনীতি গড়তেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ’ নামে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে এ ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি আশা করি, আগামী বাজেটে আয়ের একটি নতুন খাত উন্মোচিত করবে সরকার। যারা অবৈধভাবে আয় করেছে, করখেলাপি, ঋণখেলাপি ও বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তাদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ এবং তাদের জব্দ করা সম্পদ বিক্রি করেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে বাজেটে আয়ের একটি নতুন খাত হিসেবে দেখানো হবে। কীভাবে দেখানো যাবে, সে বিষয়ে ২০ বছর আগের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘আশায় আছি, অর্থ উপদেষ্টা সবাইকে চমকে দিয়ে চুরি করা টাকা, অবৈধভাবে উপার্জিত ও পাচার করা টাকা, দেশের ভেতরে ঋণ করে ফেরত না দেওয়া টাকা, করখেলাপির টাকা– যা এই ৯ মাসে জব্দ করা হয়েছে, তা বাজেট অর্থায়নে ব্যয় করার ঘোষণা দেবেন। আগামী বাজেটে এটি না হলেও ভবিষ্যতে আমাদের এটি করতে হবে।’

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বর্তমান সরকার যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তা আগের সরকারের মতো গতানুগতিক বাজেটই হচ্ছে বলে মনে করছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, বৈষম্যবিরোধী অবস্থান থেকে সরকার নতুন কিছু করতে যাচ্ছে– এমন কিছু এখনও দৃশ্যমান নয়। গতানুগতিক বাজেটের চরিত্র হলো কর বাড়াতে পরোক্ষ করে বোঝা বাড়ানো। অথচ উচিত প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো। কিছু মানুষের বিত্ত-বৈভব দেশে অসাম্য তৈরি করছে। মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে ৮৫ শতাংশ সম্পদ চলে গেছে। সম্পদের কোন কোন অংশ করের আওতার বাইরে রয়ে গেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে আওতায় আনা উচিত।

তিনি বলেন, এখন সরকারি যেসব আছে, তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া এবং অতিমূল্যায়িত। উচিত ছিল প্রকল্পগুলোকে এ, বি, সি ক্যাটেগরিতে ভাগ করা। যেসব প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন আছে, সেগুলো বাদ দিতে হবে। যেসব প্রকল্পের কারণে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে। সামাজিক সুরক্ষার যে ধরনের প্রকল্প প্রত্যাশিত, সেগুলো সেভাবে হচ্ছে না। কাঠামোগত পরিবর্তন কতটুকু হলো, বৈষম্যবিরোধী চরিত্রটা বদল হল কিনা, সেটিই দেখার বিষয়।

নানা সংকটের মধ্যেও বর্তমানে দেশের অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল আছে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিশেষত বৈদেশিক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সাফল্য। বিদেশি ঋণের চাপ বছর বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার করে বাড়ছিল এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হবে যে, তারা এ চাপকে কমিয়ে আনছে। এরই মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে, যা না করলে জ্বালানি আমদানি কঠিন হতো। তবে নীতির অনিশ্চয়তার কারণে ব্যক্তি বিনিয়োগ থমকে আছে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সহায়ক নয়। আর্থিক খাতে এখনও ভঙ্গুরতা আছে।

তাঁর মতে, এখন কর্মসংস্থান দরকার। এ জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ দরকার। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকারীরা ছয় মাসের নীতি দেখে বিনিয়োগ করবেন না। তারা মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে নীতির স্থিতিশীলতা চান। নির্বাচনের পর এখনকার নীতিগুলো অব্যাহত থাকবে কিনা, তা বুঝতে চান। সরকার এখনকার বিনিয়োগ নীতি নিয়ে রাজনীতিবিদের সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হতো। কিন্তু অন্য বড় আলোচনার ফাঁকে অর্থনীতি হয়তো স্থান পায়নি। বিনিয়োগকারীরা নিশ্চয়তা পেলে হয়তো বিনিয়োগে উৎসাহিত হতো।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাজ নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন আগামী দিনের জন্য কোনো সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ছিল না। কাজটি ছিল অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে উত্তরাধিকার সূত্রে কী অবস্থায় পেয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করা। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কিছু সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন করছে। কিছু সুপারিশ যেভাবে চাওয়া হয়েছিল, সেভাবে হয়নি।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির প্রতিযোগিতায় ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিতার্কিকদের হাতে ট্রফি তুলে দেন।

আরও পড়ুন

×