ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ক্রিস গার্ডনার

গৃহহীন থেকে কোটিপতি

গৃহহীন থেকে কোটিপতি

ফাইল ছবি

সৌমিক মহাজন

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ০০:৩৩

১৯৮০ সালের শুরুর দিকে যখন ২৭ বছর বয়সী যুবক ক্রিস গার্ডনার তার একমাত্র ছোট ছেলেকে নিয়ে সানফ্রান্সিসকোর পাবলিক টয়লেটের মেঝেতে শুয়ে ছিলেন; তখন কে ভেবেছিল, এ মানুষটিই একদিন আমেরিকার অন্যতম সফল ব্যবসায়ী ও কোটিপতি হয়ে উঠবেন! কঠোর সংগ্রামী এই মানুষটি গৃহহীন অবস্থা থেকে আজ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

১৯৫৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পউইসকন্সিনের মিলওয়াওকিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ক্রিস গার্ডনার। সেকেন্ডারি স্কুল শেষ করেই ক্রিস গার্ডনার আমেরিকান নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। সেখানে ডা. রবার্ট এলিস নামে একজন ডাক্তার ক্রিসকে তার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল রিসার্চার হিসেবে কাজ করার আমন্ত্রণ জানালে তিনি চলে আসেন ডা. রবার্টের সঙ্গে কাজ করতে।

১৯৭৭ সালে ক্রিস গার্ডনার ভার্জিনিয়ার শেরি ডাইসন নামে এক মেয়েকে বিয়ে করলেও পারিবারিক ঝামেলায় জ্যাকি মেডিনা নামে আরেক ডেন্টাল ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে ক্রিসের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্স হয়ে যায়। এর পর জ্যাকি মেডিনার গর্ভে ক্রিসের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। সে সময়টিতে ক্রিস গার্ডনার ল্যাব সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বেতন না পাওয়ায় তিনি চাকরি ছেড়ে মেডিকেলের যন্ত্র তৈরি করে এমন কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিসেবে যোগদান করেন।

এক দিন তিনি রাস্তায় বব ব্রিজেস নামে একজনকে লাল ফেরারি পার্ক করতে দেখেন। কৌতূহলবশত ক্রিস ববের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তিনি একজন স্টকব্রোকার হিসেবে কাজ করেন। ক্রিসের অনুরোধে বব ব্রিজেস একটি নামকরা স্টকব্রোকার ফার্মে তাকে ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের আগের দিন অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করার অপরাধে জরিমানা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তাকে এক দিনের জন্য জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পেলেও তার গায়ে ছিল আটক হওয়ার সময়কার নোংরা পোশাক। তা সত্ত্বেও চাকরির প্রতি তার আবেগ ও উৎসাহ দেখে তিনি ডিন রাইটার ডেনোল্ডে চাকরির সুযোগটি পেয়ে যান।

স্টকব্রোকারের চাকরিটি ছিল স্বল্প বেতনের ট্রেনিং কোর্স। ট্রেনিংয়ে সফল হলেই চাকরিটি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল। ফলে অর্থাভাবে ক্রিসকে এ সময় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ সময় ক্রিস গার্ডনার প্রচুর পরিশ্রম শুরু করেন, যেন তিনি চাকরিটি ভালো বেতনসহ স্থায়ী করতে পারেন। এ সময় জ্যাকিও তাকে ছেড়ে চলে যান। ফলে ক্রিসের নূ্যনতম বেতন দিয়ে খাওয়া ও ঘর ভাড়া দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই ক্রিস ঘর ছেড়ে অল্প বয়সী ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝেমধ্যে দিনের বেলায় ছেলেকে ডে-কেয়ারে রেখে চাকরিতে চলে যেতেন। চাকরি শেষে রাত কাটাতেন রাস্তার পাশে, পার্কের বেঞ্চে, অফিসের ডেস্কে, এমনকি মাঝেমধ্যে পাবলিক টয়লেটের মেঝেতেও। ভাগ্য ভালো থাকলে কোনোদিন পেয়ে যেতেন চার্চের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার সুযোগ। পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের আশায় ঝাড়ুদার, মালীর কাজ থেকে শুরু করে নিজের রক্ত পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে ক্রিস পাকাপোক্তভাবে স্টকব্রোকার হিসেবে চাকরিটি পেয়ে যান। ভালো বেতন পাওয়ায় এর পর তিনি একটি ঘর ভাড়া করে ছেলেকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। মূলত এ সময় থেকেই তিনি তার স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সুযোগ পান।

১৯৮৫ সালে ক্রিস গার্ডনারের নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড স্ট্রিটে কাজ করার সুযোগ ঘটে। এর দুই বছর পর ১৯৮৭ সালে ক্রিস গার্ডনার মাত্র ১০ হাজার ডলার নিয়ে শিকাগোতে প্রতিষ্ঠা করেন এধৎফহবৎ জরপয ্‌ ঈড় নামে নিজের একটি ব্রোকারেজ ফার্ম। নিজের আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের ফলে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানকে খুব দ্রুত লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হন। ২০০৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি কয়েক মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন ঈযৎরংঃড়ঢ়যবৎ এধৎফহবৎ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঐড়ষফরহমং নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে ক্রিস গার্ডনার আমেরিকার ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তার আয়ের একটি বিশাল অংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত দান করেন, যারা গৃহহীনদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে। নিজের কাজের পাশাপাশি একজন অনুপ্রেরণাদাতা বক্তা হিসেবেও হাজারো তরুণকে স্বপ্ন দেখানোর কাজ করে চলেছেন এককালের গৃহহীন ক্রিস গার্ডনার।

আরও পড়ুন

×