ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

স্কুল কাহারা চালাইতেছেন?

স্কুল কাহারা চালাইতেছেন?

.

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:৪৬ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:৪৭

ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ তুলিয়া মৌলভীবাজারের জুড়ীর শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এক মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ও তাহার বাবার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হইয়াছে বলিয়া শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে। ঘটনাটি শুধু অগ্রহণযোগ্যই নহে, তৃণমূলে ক্ষমতাবানদিগের ক্ষমতার দম্ভের এক উৎকট প্রদর্শনীও বটে। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে উদ্ধৃত করিয়া বলা হইয়াছে, সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার বন্ধের পূর্বে প্রতিষ্ঠানটির একটা ল্যাপটপ চুরি হয়; ছুটি শেষে প্রতিষ্ঠান খুলিলে ল্যাপটপটি পাওয়া যায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের ড্রয়ারে। ইহাতে নাকি  ওই শিক্ষার্থীর নাম ‘জিসান’ পাসওয়ার্ড হিসাবে দেওয়া ছিল, তাই সহকারী প্রধান শিক্ষক অভিযোগ তোলেন, ঐ শিক্ষার্থীই উহা চুরি করিয়াছিল। তবে আমরা মনে করি, এ হাস্যকর প্রক্রিয়ায় জিসানকে চুরির দায়ে অভিযুক্ত করা তো দূরস্থান বরং আঙুল উঠিতে পারে খোদ অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে। জিসানের বাবা প্রতিষ্ঠনাটিতেই গত সিকি শতক ধরিয়া নৈশপ্রহরী রূপে চাকুরি করিতেছেন; আমাদিগের সন্দেহ, দরিদ্র বলিয়াই জিসানকে একপ্রকার বলির পাঁঠা বানাইবার প্রয়াস চলিয়াছে।

আমরা মনে করি, এমনকি জিসান যদি ল্যাপটপটি সরাইয়াও থাকে, তাহা সত্ত্বেও তাহার ওপর নির্যাতন চালানো দেশের কোনো প্রচলিত আইন সমর্থন করে না। অথচ ঠুনকো এক অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং এমনকি অধ্যক্ষ পর্যন্ত জিসানের ওপর এমন শারীরিক নির্যাতন চালাইয়াছেন, শিশুটি অদ্যাবধি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকিতে বাধ্য হইতেছে। আমরা  ইতোপূর্বে একাধিকবার নানা ঠুনকো অভিযোগে কারখানার মালিক বা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণকে দরিদ্র কিশোর কর্মচারীর ওপর একই প্রকার নির্যাতন চালাইতে দেখিয়াছি। ইহা বলা বাহুল্য হইবে না, যদি সেই সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হইত, তাহা হইলে জিসানের ন্যায় কিশোরকে এ যন্ত্রণা পোহাইতে হইত না।

আশাব্যঞ্জক হইল, উক্ত ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই প্রতিবাদমুখর হইয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, তাহাদের দাবি মানিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উক্ত নির্যাতক সভাপতি, অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে অব্যাহতি দিবে; একই সঙ্গে নির্যাতনের দায়ে তাহাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও রুজু করা হইবে।

আরও পড়ুন

×