ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

গণগ্রেপ্তার গণতান্ত্রিক নীতি নহে

গণগ্রেপ্তার গণতান্ত্রিক নীতি নহে

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:১৩ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩:১২

বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির পূর্বে, চলাকালে, এমনকি পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মী যেইভাবে আটক ও মামলার শিকার হইতেছেন, উহা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য স্বাস্থ্যকর হইতে পারে না। শনিবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আয়োজিত মহাসমাবেশ ঘিরিয়া এই পর্যন্ত সমগ্র দেশে বিএনপির সাড়ে সাত সহস্রাধিক নেতাকর্মী আটক হইয়াছেন। দলটির হিসাবে অন্তত ৯ জন নিহত ও প্রায় আট সহস্র আহত হইয়াছেন। কেবল সংখ্যাগত দিক দিয়া এই চিত্র অবিশ্বাস্য মনে হইলেও উহার বাস্তবতা প্রতিভাত হয় বিএনপির সর্বোচ্চ স্তর জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রতি দৃষ্টি দিলে। ১৯ সদস্যের এই ফোরামের প্রয়াত চারজন এবং অসুস্থতা বা নিরুপায় প্রবাসজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় পাঁচজনের কথা বাদ দিলে বাকি ১০ জনই বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কিংবা গ্রেপ্তার অথবা আত্মগোপনে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের এহেন পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার স্বার্থেই কাম্য হইতে পারে না।

কাহারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকিলে মামলা, গ্রেপ্তার, এমনকি দণ্ডাদেশেও আপত্তি করিবার কিছু নাই; আইনকে নিজস্ব গতিতে চলিতে দিতে হইবে। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীকে যেই সকল মামলায় গ্রেপ্তার কিংবা আটকের পর মামলায় জড়ানো হইতেছে, সেইগুলির সারবত্তা লইয়া গুরুতর প্রশ্ন রহিয়াছে। বিএনপি মহাসচিব নাশকতা কিংবা হামলা-ভাঙচুরের সহিত জড়িত– কে বিশ্বাস করিবে? আর তাঁহার বিরুদ্ধে আক্ষরিক অর্থেই শতাধিক মামলার উপযুক্ত ‘অপরাধ’ খুঁজিয়া বাহির করাও কষ্টসাধ্য কর্ম বটে! আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের শাসনামলে যেই দেড় লক্ষাধিক মামলায় বিএনপির প্রায় ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীকে আসামি করা হইয়াছে, উহার অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত। ইহার মধ্য দিয়া কেবল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের পথই রুদ্ধ করা হইতেছে না; পুলিশ-প্রশাসন ও আইন-আদালতের প্রতিও জনসাধারণের আস্থা ক্ষুণ্ন হইতেছে। উপরন্তু ‘গায়েবি’ মামলা লইয়া ‘আইনের হাত’ ব্যস্ত থাকিবার কারণে যদি আসল অপরাধী পার পাইয়া যায়, আইনের শাসনের তাহা হইলে থাকিল কী?

ইহাও কম বিস্ময়কর নহে, আওয়ামী লীগের ন্যায় ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতাসীন, তখন এইভাবে বিরোধী দল গণগ্রেপ্তারের শিকার হইতেছে। স্বাধীনতার পূর্ব হইতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিভিন্ন দফায় এইরূপ মামলা ও গ্রেপ্তারের শিকার হইয়া আসিয়াছেন। সেই দলটি কীভাবে অপরের উপর একই নির্যাতন সমর্থন বা প্রযোজনা করিতে পারে? আমরা প্রত্যাশা করিব, বিলম্বে হইলেও ক্ষমতাসীন দল গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি মনোযোগী হইবে। গণগ্রেপ্তার বন্ধ ও গায়েবি মামলাগুলি প্রত্যাহার করিয়া বিরোধী দলের সহিত আন্তরিক ও কার্যকর সংলাপের সুযোগ প্রসারিত করিবে। আর হামলা, মামলা কিংবা গণগ্রেপ্তার করিয়া যে বিরোধী দলকে দমানো যায় না– আন্দোলন-সংগ্রামে অভিজ্ঞ ও অনুসৃত আওয়ামী লীগের চাইতে অধিক কোন রাজনৈতিক দল জানিবে?

আরও পড়ুন

×