ওয়াসার ভূতুড়ে বিলের উৎস

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:১৩ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:১৩
ঢাকা ওয়াসার মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে ‘ডুপ্লি’ নামে পরিচিত ভাড়াটে লোক দিয়া পানির বিল প্রস্তুতের যে অভিযোগ উঠিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শনিবার সমকাল জানাইয়াছে, নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসার মিটার রিডারদের বাসায় গিয়া মিটার দেখিয়া পানির বিল প্রস্তুত করিবার কথা থাকিলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহারা টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা লোক দিয়া কাজটি সম্পন্ন করেন। উপরন্তু ওই ভাড়া করা লোকেরাও অনেক ক্ষেত্রে রিডিং না দেখিয়া ঘরে বসিয়াই বিল তৈয়ার করেন। এমনও অভিযোগ রহিয়াছে, তাহারা গ্রাহকের নিকট হইতে সুযোগ বুঝিয়া উপরি আদায় করেন। আমরা মনে করি, এহেন অবৈধ বিল প্রস্তুত প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়া সংশ্লিষ্ট মিটার রিডাররা শুধু সংস্থাটির নিয়মেরই ব্যত্যয় ঘটাইতেছেন না; ওয়াসার গ্রাহকদের সহিত প্রতারণা করিয়া চলিয়াছেন। কারণ এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের উপর অতিরিক্ত বিল চাপাইবার অবকাশ যদ্রূপ থাকিয়া যায়, তদ্রূপ ওয়াসার পক্ষেও সরবরাহকৃত পানি বাবদ আয়-ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব মিলানো অসম্ভব হইয়া পড়ে।
অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক, ঢাকা ওয়াসায় বৎসরের পর বৎসর চলমান এমন অপকীর্তি বন্ধে কর্তৃপক্ষের খুব একটা হেলদোল নাই। ইহাতে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক, এই অনিয়মের পৃষ্ঠপোষকরা হযতো ইতোমধ্যে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সংস্থাটি পরিচালনার দায়িত্বেও থাকিতে পারেন। প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনমতে দুর্নীতির কারণে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসা ১৪ মিটার রিডারকে চাকরি হইতে অব্যাহতি দেয়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই উহাদের কয়েকজন চাকুরি ফিরিয়া পান; বাকিরাও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।
আমরা জানি, ঢাকা ওয়াসা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল গ্রাহককে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করিতে না পারিলেও বৎসর বৎসর পানির মূল্য বৃদ্ধি করিয়া বিশেষত সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তি দ্বিগুণ করিয়াছে। ইহার সহিত মিটার রিডারদের অনিয়মজাত ভূতুড়ে বিল যুক্ত হইলে এমনিতেই জীবনযাত্রার অত্যধিক ব্যয়ে অতিষ্ঠ গ্রাহকদের রাজপথে প্রতিবাদমুখর হওয়া ভিন্ন উপায় থাকিবে না। এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পরিহারে আমাদের প্রত্যাশা, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তাহাদের শূন্য সহিষ্ণুতার প্রতিশ্রুতি কার্যকর এবং ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে গ্রাহকদের সকল অভিযোগের প্রতিকারে তৎপর হইবে।