অর্থনীতিতে নূতন উদ্বেগ

.
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:৪৭ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:৪৭
দেশের অর্থনীতির কি সর্বাঙ্গেই ব্যথা চলিতেছে? না হইলে এক ব্যথার উপশম ঘটাইবার পর নূতন আরেক ব্যথা উদ্ভূত হইতেছে কেন? অন্তত শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের ‘আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৪০০ কোটি ডলার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়িলে যে কাহারও মনে এমন প্রশ্নই জাগিবে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত চলমান অর্থবৎসরের প্রথম প্রান্তিক তথা জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্য সম্পর্কিত তথ্যের ভিত্তিতে সমকালের প্রতিবেদনটি লিখিত হইয়াছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত সময়ে আমদানি কমাইয়া বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের মাধ্যমে চলতি হিসাবের ঘাটতি মিটাইয়া ৮৯ কোটি ডলারের অধিক উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করা সম্ভব হইলেও, আর্থিক হিসাবে নজিরবিহীনভাবে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ঘাটতি সৃষ্টি হইয়াছে। প্রতিবেদনমতে, দেশের আর্থিক হিসাবে গত অর্থবৎসরের এই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৮৪ কোটি ডলার। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি হিসাবকে উদ্বৃত্তের ধারায় ফিরাইয়া আনিয়াও স্বস্তিতে থাকিতে পারিতেছে না, বরং নূতন করিয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতনসহ আরও বেশ কিছু সংকটের আশঙ্কা করিতেছে।
আর্থিক হিসাবে দেশের উৎপাদনমূলক, সেবা, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ, ঋণ-অনুদানসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈদেশিক আয় জমা হয়। এই তহবিল ব্যবহার করিয়াই আমদানি বিল, বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ ইত্যাদি কর্ম সম্পাদিত হইয়া থাকে। কিন্তু এই খাতে ঘাটতি থাকিলে ওই সকল বৈদেশিক বিল ও ধারদেনা পরিশোধে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিতে হয়। উল্লেখ্য, দুই বৎসর পূর্বেও দেশের রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের অধিক; কিন্তু বর্তমানে উহা অর্ধেকের অধিক হ্রাস পাইয়াছে। অন্যদিকে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি থাকিলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। নূতন বিদেশি ঋণ জোগাড়ও কঠিন হইয়া পড়ে। অধিকন্তু এই পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋণদাতারা নূতন নূতন শর্ত আরোপ করেন; ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রেও জটিলতার কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কঠিন হইয়া পড়ে। এমনটা হইলে চলমান রেকর্ড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপসমূহ যে নিষ্ফলা হইয়া যাইতে পারে, উহা বুঝিতে কাহারও বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। বিশেষত ডলার সংকট বাড়িয়া গেলে জ্বালানিসহ জরুরি বহু পণ্য আমদানি দুরূহ হইতে পারে।
আর্থিক হিসাবের এই ঘাটতি এমন সময়ে সৃষ্টি হইল যখন দেশে একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় ভয়াবহ রূপে বৃদ্ধির কারণে জনগণ বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ রীতিমতো হাঁসফাঁস করিতেছে, অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরিয়া দেশে নূতন করিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হইয়াছে। এই অবস্থা আর যাহাই হউক, অর্থনীতির মেরামতির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য অনুকূল নহে। তাই আমরা মনে করি, অবিলম্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে সরকারকে দেশের সচেতন মানুষদের পরামর্শ শুনিয়া কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে; একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সহিত পরামর্শক্রমে অর্থনীতির গুরুতর রোগসমূহ চিহ্নিত করিয়া আশু নিরাময়ের পথে হাঁটিতে হইবে।