ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

যমুনায় নতুন সেতু

রেলপথের সামনে রাঙা সকাল

রেলপথের সামনে রাঙা সকাল

দণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ারুল ইসলাম -সমকাল

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২০ | ১৪:৪৬

প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু' নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান আক্ষরিক অর্থেই রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য রাঙা সকাল নিয়ে আসছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে ওই নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল, ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হতে যাওয়া রেল সেতুটি তা আরও অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিদ্যমান সেতুটিতে যদিও রেল চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। আলাদা রেল সেতু নির্মিত হওয়ার পর দেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে রেল যোগাযোগ নিঃসন্দেহে আরও দ্রুত, ঘন ও সহজ হবে। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে তার সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এ প্রসঙ্গে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জাপানি সংস্থা জাইকাকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। জাপান আমাদের সময়ের পরীক্ষিত উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। একই সঙ্গে রেলের ক্ষেত্রেও তাদের সহযোগিতা যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। বস্তুত একটি জনবহুল ও সীমিত ভূমির দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলপথই প্রধান মাধ্যম হওয়া উচিত।

এটা ঠিক, নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে প্রকৃতি প্রদত্ত যে বিস্তীর্ণ নৌপথ ছিল এবং এখনও টিকে আছে, তাও হতে পারে সাশ্রয়ী ও পরিবেশসম্মত পথ। কিন্তু গতি ও গম্যতার হিসেবে রেলপথই বাস্তবসম্মত। অথচ আমরা সড়কপথে যে মনোযোগ ও অর্থ ব্যয় করেছি, তার সিকিভাগও রেলপথে নয়। বিলম্বে হলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে টানা তিন মেয়াদে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে মনোযোগ দিয়েছে ও বিনিয়োগ করছে, তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। আমাদের মনে আছে, গত বছর মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের সভায় নতুন করে মহাসড়ক নির্মাণ না করে রেলপথ সম্প্রসারণে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ওই সময় যুক্তরাজ্যের বিদায়ী হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে পদ্মা সেতু থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণেও সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ওই আলোচনা যে নিছক তাৎক্ষণিক ছিল না, নতুন রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ রেখেছেন।

আমরা এটাও ভুলিনি, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম উড়াল সড়কের পরিবর্তে আরেকটি বিশেষ রেলপথ নির্মাণে সৌদি আরবের বিনিয়োগের আগ্রহ সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী গত বছর আভাস দিয়েছিলেন। সামনের দিনগুলোতে এ ব্যাপারেও আমরা অগ্রগতি দেখতে চাই। স্বীকার করতে হবে, এ পর্যন্ত রেলের সম্প্রসারণ কাঙ্ক্ষিত পথেই চলছে। আগের বিভিন্ন সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক পথেই নতুন করে রেল চলছে। বর্তমান সরকারের আমলেই গঠন করা হয়েছিল পৃথক মন্ত্রণালয়। বাজেটে রেলের জন্য আলাদা ও উল্লেখযোগ্য বরাদ্দও দেখেছি আমরা। এখন নজর দিতে হবে রেলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সংযুক্তির দিকে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও কূটনৈতিক মর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুতেও প্রথম থেকেই সংযুক্ত থাকছে রেলপথ। যমুনা নদীতেও পৃথক রেল সেতু গোটা দেশকেই রেল নেটওয়ার্কের সচ্ছল ও সচল নেটওয়ার্কে নিয়ে আসবে। নতুন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রেল যোগাযোগের সেতুবন্ধন। আমরা এখন দেখতে চাইব, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নতুন রেল সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ও তার জের ধরে প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধির যে নজির আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখে এসেছি, এর পুনরাবৃত্তি এখানে দেখতে চাই না। রেলপথের সামনে যে রাঙা সম্ভাবনা ফুটে উঠছে, তা কাজে লাগাতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতা প্রায়োগিক পর্যায়েও প্রতিফলিত হতে হবে।

আরও পড়ুন

×