ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

টিআইর ধারণাসূচক

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হোন

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হোন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:০০

করোনা দুর্যোগকালে স্বাস্থ্য খাতের নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি জনমনে বিস্ময় যুগপৎ অনেক প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। সরকার যদিও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করেনি, কিন্তু এর পরও অনিয়ম-দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হয়েছে নির্দি্বধায় তা বলা যাবে না। শুক্রবার সমকালসহ অন্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুই ধাপ পেছানোর খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। ২০২০ সালের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের এই তালিকায় ১২ নম্বরে নেমেছে বাংলাদেশ। মূলত স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে এবার বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ২০২০ সালের ১৮০ দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গতবারের মতোই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম (খারাপ থেকে ভালো) অনুসারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

আমরা জানি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতার অঙ্গীকার রয়েছে। এও সত্য, দুর্নীতি নির্মূলে দুর্নীতি দমন কমিশন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অধিকতর সক্রিয়। কিন্তু এটাও অস্বীকারের উপায় নেই, দুর্নীতি আমাদের সমাজে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনি কাঠামোর অভাব নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই জবাবদিহি যথেষ্ট নয়। করোনা জয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। সরকার দ্রুততার সঙ্গে করোনার টিকা এনে তা প্রদানে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে, এটি সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। এখন যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতের ভূমিকাই প্রধান। আমরা জানি, নিকট অতীতে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক টিম। দুর্নীতি প্রতিরোধে তারা ২৫ দফা সুপারিশও করেছিল। শুধু হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নয়, ওষুধ সরবরাহে অনিয়মসহ নানা চিত্র উঠে এসেছিল দুদকের তদন্তে। এর পরও করোনা দুর্যোগের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসাধুদের অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে।

স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সরকারের প্রচেষ্টা কম না হলেও দুর্নীতিবাজদের থাবা গুটানো যায়নি। করোনা মোকাবিলায় সরকারের নানা রকম শুভ উদ্যোগ অসাধুদের কল্যাণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের মনে আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগের কারণ ছিল মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা দুর্যোগকালে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম-দুর্নীতির গণসমালোচনারই ফল। মহামারিকালে স্বাস্থ্য খাতের দায়িত্বশীল কারও কারও স্বেচ্ছাচারিতায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা। জবাবদিহি ব্যবস্থার অভাবেই এমনটি ঘটে বলে নানা মহল থেকে এমন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত হয়। আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও বিস্তৃত ও কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

টিকাদান কার্যক্রম যাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্ট কারোর অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, এ ব্যাপারে সতর্কতার বিকল্প নেই। করোনা দুর্যোগকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এ খাতের দুর্নীতিবাজদের কারণে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অতীতে অনেক অভিযোগে অভিযুক্ত এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলো আমলে রেখে স্বচ্ছতা-দায়বদ্ধতা-জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর অবস্থানই যথাযথ প্রতিবিধান বলে আমরা মনে করি। এটা ঠিক, আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ হিসেবে থাকতে চাই না- এ উপলব্ধি বাড়ছে। একই সঙ্গে এও সত্য, দুর্নীতি-অনিয়ম কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হলেও আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটেছে। স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের সারিতে নিজেদের অবস্থান করে নিতে পেরেছি। কিন্তু এটাও মনে রাখা চাই, মর্যাদাশীল ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে উন্নত বিশ্বের সারিতে নিজেদের দেখতে চাইলে 'দুর্নীতিকে না' বলতেই হবে। আমাদের এটা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে, দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন। টিআইর প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখে প্রতিকারে মনোযোগ বাড়ানোটাই শ্রেয় বলেও আমরা মনে করি।

আরও পড়ুন

×