ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বুদ্ধিজীবীরা এখন প্রলোভন ও ভয়ের শিকার

বুদ্ধিজীবীরা এখন প্রলোভন ও ভয়ের শিকার

সাক্ষাৎকার গ্রহণ:সাইফুর রহমান তপন

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২১ জুন ২০২২ | ১৩:৩২

অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৭ সালে একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘকাল ধরে তিনি পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত। বর্তমানে তাঁর সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ত্রৈমাসিক সাহিত্য-সংস্কৃতির পত্রিকা নতুন দিগন্ত। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়ে ১৯৫৫ সালে স্নাতক ও ১৯৫৬ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেছেন যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় ও পিএইচডি করেছেন লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এর আগে তিনি নটর ডেম কলেজ ও ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। প্রবন্ধ-গবেষণা, ছোটগল্প, উপন্যাস, অনুবাদ সাহিত্য বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় একশ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একুশে পদক (১৯৯৬), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৮), ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারসহ (২০১৯) উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন।


সমকাল: আপনার ৮৭তম জন্মদিনে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জন্মদিনের অনুভূতি একটু বলুন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ধন্যবাদ। জন্মদিন পালনে আমি কিন্তু আগ্রহী নই। আগে এ বিষয়ে খেয়ালই করতাম না- জন্মদিন এলো, না গেল। এখন করি। প্রধান কারণ শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা; দ্বিতীয় কারণ বয়স বাড়া। বয়স বাড়লে মানুষ পেছনের কথাই বেশি করে ভাবে। আমিও ভাবছি। বিশেষভাবে মনে পড়ছে আপনজনের কথা, যাঁরা চলে গেছেন। মনে পড়ছে অনেক সুখের স্মৃতিও। দুয়ে মিলে অনুভূতিটা মিশ্র।

সমকাল: দীর্ঘ কর্মজীবনের তৃপ্তি-অতৃপ্তি কিছু আছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তৃপ্তি এটা, আমি যা করতে চেয়েছিলাম, তা করতে ত্রুটি করিনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি মোটেই অনুকূলে ছিল না; বিরূপই বলতে হবে। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পাওয়া যায়নি; অধিকাংশ সময়ে বৈরিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু কাজ অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার মূল কাজটা ছিল সাংস্কৃতিক। সেখানে আমার ভূমিকা নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। তবে কাজে ছিলাম- এটা ভেবে আনন্দ পাই। অতৃপ্তি এখানে যে, কাজ আরও সুচিন্তিতভাবে করা দরকার ছিল। কর্মের সঙ্গে চিন্তার সংযোগ আরও গভীর হতে পারত।

সমকাল: একটা সময় ছিল, যখন আপনার বই পড়ে তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হতো। পরিস্থিতি কি এখনও তেমন আছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ওটি ছিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়। তখন প্রগতিশীল চিন্তার খুব দরকার ছিল। তরুণরা সরবরাহ চাইছিল। সেটা পাচ্ছিল না। বুদ্ধিজীবীদের বড় একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন; কেউ কেউ আবার সুবিধাপ্রাপ্তির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বড় একটা ধাক্কা এসেছিল সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের বিভাজন থেকে। সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আমি লিখছিলাম সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। সামন্তবাদ ছিল সংস্কৃতিতে; পুঁজিবাদ এসেছে অর্থনীতিতে এবং সে কারণে সংস্কৃতিতেও। তরুণরা ওই ধরনের লেখা চাইছিল। পরিস্থিতি এখন আর তেমন নেই। মূল কারণ পুঁজিবাদ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি চতুর, দক্ষ ও নৃশংস। জ্ঞানচর্চাকে নিরুৎসাহিত করছে; উৎসাহিত করছে ভোগবাদিতাকে। সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন গড়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। তরুণদের সঙ্গে মিলবার; মিলবার মতামত বিনিময় করার সুযোগগুলো সংকুচিত হয়ে গেছে। যেমন, ধরা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের অনুপস্থিতি। ছাত্র সংসদের আবাসিক (হল এবং কেন্দ্রীয়) কাজে বিশ্ববিদ্যালয় এক সময়ে মুখরিত থাকত। আমরা শিক্ষকরা যোগ দিতাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও ছাত্র সংসদগুলো জীবন্ত ছিল। গত তিন যুগ হলো, ছাত্র সংসদ নেই। তরুণদের সাংস্কৃতিক ক্ষুধাকে মেটানোর সুযোগগুলো সংকুচিত হয়ে গেছে। বলা যায়, সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এটা সর্বত্র সত্য। সে জন্য দেখা যাচ্ছে তরুণরা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে; তারা বিমর্ষ থাকে। কেউবা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে কী করে? হচ্ছে না।

সমকাল: আপনারা যে দৃঢ়তা নিয়ে ঔপনিবেশিক এবং সামরিক শাসনামলে নিজের মত প্রকাশ করেছেন; সে দৃঢ়তাসম্পন্ন মানুষ এখন বিরল। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: কারণ একাধিক। একটা কারণ প্রলোভন, আরেকটা ভয়। প্রলোভন ও ভয় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা প্রলুব্ধ হচ্ছেন। অপরদিকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে গেলে বিপদ হতে পারে- এই শঙ্কাও রয়েছে। আগের দিনে এত সুযোগ ছিল না; এত ভয়ও ছিল না। আরও একটা ঘটনা ঘটেছে। একাত্তরে অনেক বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন। তাঁরা সবাই মেরুদণ্ডসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আবার এটাও সত্য যে, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের মাধ্যমও আগের মতো নেই। খবরের কাগজ ও টেলিভিশনে সেসব মতই প্রকাশ করা যায়, যা মালিক ও সরকারের পছন্দ; বিরুদ্ধ মতের জায়গা খুবই কম।

সমকাল: তারুণ্যও কি আগের মতো দ্রোহী ও সংগঠনমুখী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: না, আগের মতো দ্রোহী ও সংগঠনমুখী নয়। তারুণ্যের প্রধান গুণ হচ্ছে বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের প্রয়োজনীয়তা তরুণকে সংগঠনমুখী করে। বিদ্রোহের প্রবণতা দমন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের একাধিপত্য চলছে। আবাসিক হলগুলোতে থাকতে হলে; কোথাও কোথাও এমনকি সিট পেতে হলেও সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের তোয়াজ করতে হয়। পাড়া-মহল্লায় আগে সাংস্কৃতিক কাজ যে খুব বেশি হতো, তা নয়, তবে এখন তা আরও কমে গেছে। খোলা জায়গা নেই মিলবার, মিশবার। কিশোর আন্দোলন যা ছিল এখন তা নেই। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট তরুণদের অসামাজিক করে তুলতে সাহায্য করছে। তরুণরা অসামাজিক প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে।
আসল দুর্বৃত্ত হচ্ছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদ চায় না তরুণরা বিদ্রোহ করুক; তারা সংগঠিত হোক। পুঁজিবাদ মেরুদণ্ডহীন তরুণ সৃষ্টি করছে। এটা কেবল বাংলাদেশের নয়; বিশ্বব্যাপী সত্য। বিবেকবান মানুষদের পক্ষে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আবশ্যিক কর্তব্য।
সমকাল: আপনি সাহিত্যের মানুষ, কিন্তু লেখালেখির বড় অংশ রাজনীতি নিয়ে। এর কারণ কী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির কোনো বিরোধ নেই। আসলে কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। যেখানে রাষ্ট্র আছে, রাষ্ট্রের শাসন রয়েছে; সেখানে রাজনীতি থাকবেই। তা ছাড়া আমি মূলত প্রবন্ধ লেখক। প্রবন্ধ যিনি লেখেন, তাঁকে তো ইতিহাসের কাছে যেতেই হয়। ইতিহাস কেবল অতীতের ব্যাপার নয়; ইতিহাস বর্তমানেও প্রবাহিত। প্রবাহিত সে ভবিষ্যতের দিকে। আর ইতিহাস তো কেবল ঘটনা নয়। ইতিহাসে সমাজ থাকে, সমাজে শ্রেণি থাকে; থাকে শ্রেণি-দ্বন্দ্ব। আমার লেখায় অনিবার্যভাবেই ইতিহাস ও সমাজ এসে যায়। আর আমি লিখি সমাজ পরিবর্তনের পক্ষে। সেদিক থেকেও রাজনীতি না এসে পারে না।

সমকাল: সমাজতন্ত্র নিয়ে আপনি বহু দিন ধরে সোচ্চার। এ ধারার চিন্তায় কখন, কীভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এটা ঘটেছে ধাপে ধাপে। বিশেষ করে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময় থেকে। ওই সময়ে আমি বিদেশে যাই উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে গিয়ে একটু দূর থেকে দেখে সামরিক শাসনের কুৎসিত দিকটা চোখে পড়ে। দেশের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করে, এমন বইপত্রের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, যেগুলো দেশে পাওয়া যেত না। পুঁজিবাদের চরিত্র সম্পর্কেও সচেতনতা বাড়ে। পুঁজিবাদের অধীনে যে যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়- সেটাও পরিস্কার হয়ে ওঠে। আমি বুঝতে শিখি, গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যিক শর্তগুলো হলো অধিকার ও সুযোগের সাম্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যথার্থ জনপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব। এটা যে সমাজ বিপ্লব ছাড়া সম্ভব নয়- সেটাও ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে; বিশেষ করে রাজনৈতিক সাহিত্য পাঠ করে। বুঝেছি যে পুঁজিবাদের হূৎপিণ্ডটা হচ্ছে সম্পত্তির ব্যক্তিমালিকানা। ওই মালিকানাকে সামাজিক করা চাই। আর সেটা করা সম্ভব সমাজতন্ত্রে। সমাজতন্ত্র ছাড়া যে মুক্তি নেই- এই বোধটা ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রকৃত গণতন্ত্র কেবল সমাজতন্ত্রেই সম্ভব- এটাও বুঝতে শিখি।

সমকাল: রাজনীতিতে দ্বিদলীয় ধারার অবসান ঘটিয়ে বামপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প শক্তি নির্মাণের কথা বলছে। এর কৌশল নিয়েও বাম দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ ওই প্রধান দুই দলের সঙ্গে ভিড়ে যাচ্ছে। আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: দ্বিদলীয়রা আসলে একদলীয়ই। তারা ঘোষিত রূপেই জাতীয়তাবাদী এবং তাদের ওই জাতীয়তাবাদ মোটেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নয়। উল্টো তারা দু'দলই ভীষণভাবে সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরশীল। এক কথায় বলতে গেলে, তারা পুঁজিবাদী। বাংলাদেশে পুঁজিবাদ মুক্তি পেয়েছে এবং অবাধে, দুর্দমনীয় শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের ভবিষ্যৎ, প্রকৃতি, পরিবেশ- সবকিছুই বিপন্ন হচ্ছে। ধনবৈষম্য আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক। উন্নতিটা ফাঁপা। এই উন্নতি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে না। এই উন্নতির অধীনে বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এই দ্বিদলীয় ধারা অর্থাৎ একই 'আদর্শবাদী' ধারার অবসান ঘটাতে পারেন কেবল বামপন্থিরাই। কিন্তু মর্মান্তিক সত্য হলো, বামপন্থিরা বিভক্ত। অনেক ক্ষেত্রে তারা বিভ্রান্তও। বিভ্রান্তির মূল কারণ, তারা সমাজ বিপ্লবকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু রূপে নিজেদের দৃষ্টির সামনে রাখেনি। সমাজ বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংস্কৃতিচর্চা, সেটা করতে পারেনি। এক সময়ে তারা খুব বেশি বিদেশনির্ভর ছিল। যার দরুন মস্কো-পিকিং দুই লাইনে বিভক্ত হয়েছে। কেউ কেউ নকশালবাড়ির ভ্রান্ত লাইন ধরেছে। এর বিপরীতে কারও কারও ধারণা হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর ছিল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। দেশ একাধিকবার স্বাধীন হয়েছে; সরকার বারবার বদল হয়েছে। কিন্তু যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় গেছে, তারা সবাই বামপন্থিদের তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। গোটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা বামপন্থিদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। অর্থাৎ টাকাওয়ালা সবাই বামপন্থার বিরোধী।

আর হ্যাঁ, সুবিধাবাদও দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বড় দুই দলের একটির বা অপরটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারা আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও করেছে এই ভাবে যে, ওইসব দলকে সমাজতন্ত্রাভিমুখী করবে। কোথাও কোথাও হতাশা দেখা দিয়েছে। ক্লান্তির আক্রমণ যে ঘটেনি, এমনও নয়। আর পুঁজিবাদীরা তো হরদম চেষ্টা করছে বামপন্থিদের নিজেদের অধীনে নিয়ে আসতে; না পারলে দমন করতে।

সমকাল: দেশের বাম রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মত কী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে, দেশের বাম রাজনীতি ও দেশের ভবিষ্যৎ একই সূত্রে গাঁথা। দেশে যে সংকট দেখছি, সেটা পুঁজিবাদ সৃষ্টি করেছে। মুনাফালিপ্সা ও ভোগবাদিতা লেলিহান হয়ে উঠেছে। দেশের সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। বাড়ছে বেকারত্ব ও অপরাধ। এ সংকটের সমাধান পুঁজিবাদ দিতে পারবে না। কারণ পুঁজিবাদই এর স্রষ্টা। সমাধান দেবে সমাজতন্ত্র- এটা গোটা বিশ্ব সম্পর্কেই সত্য। বিশ্ব একটি ক্রান্তিলগ্নে এসে পৌঁছেছে; সেটি ধ্বংসের দিকে যাবে, নাকি সৃষ্টির? সৃষ্টির দিকে যেতে অনিবার্য হলো পুঁজিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে সমাজতন্ত্রের দিকে যাওয়া।

সমকাল: নতুন প্রজন্মের প্রতি কোনো পরামর্শ বা আহ্বান জানাতে চান?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: পরামর্শ হচ্ছে, সমাজকে বুঝতে চেষ্টা করা চাই। এই সমাজ যে অমানবিক; এটি যে বঞ্চনা ও অন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত- সেটা বোঝা চাই। এবং একে বদলে দিয়ে একটি মানবিক অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা চাই। সে জন্য পড়তে হবে, ভাবতে হবে; অভিজ্ঞতার সারাৎসার সঞ্চয় করতে হবে এবং অবশ্যই সংঘবদ্ধ হতে হবে। আগামী পৃথিবী তরুণদেরই। সেই ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য কাজে নামা চাই; এখনই, কালবিলম্ব না করে। নইলে অন্ধকার আরও গাঢ় হবে; ভবিষ্যৎ ডুবে যাবে অন্ধকারে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসা মোটেই সহজ হবে না।

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা। 

আরও পড়ুন

×