ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মতামত

সুইডেনে 'প্রাইড সেলিব্রেশন'

সুইডেনে 'প্রাইড সেলিব্রেশন'

রহমান মৃধা

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৫:৪৯ | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৯:০৪

সুইডেনের মাঠে শাকসবজির চাষ করতে কীটপতঙ্গের খুব সাহায্যের দরকার পড়েছে পরাগায়নের জন্য। আমরা জানি, পশুপাখি, মানুষসহ সব জীবজন্তুর মধ্যে যেমন পুরুষ, নারী ও উভয় লিঙ্গ রয়েছে, গাছপালারও একই অবস্থা। আমাদের দেশে মূলত নারী-পুরুষের যৌনতাকে নরমাল বলে মনে করি, বাকি সব যেমন সমকামীদের যৌনতাকে অসুস্থ মস্তিস্কের বিকাশ বলে থাকি। সুইডেনেও এমনটি ধারণা করা হতো আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে। এখন এখানে এমনকি বিশ্বের অনেক দেশে এটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুইডেনের রাজপথে সমকামী প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার নাম 'প্রাইড সেলিব্রেশন' এ প্রোগ্রাম সপ্তাহ ধরে চলেছে। বিশ্বের নানা দেশের সমকামী স্টকহোমে এসেছিলেন। 

কী কারণে মানুষ সমকামী, উভকামী বা বিষমকামী হয়? অনেক ফ্যাক্টর এর পেছনে কাজ করে থাকতে পারে। কেউ হয়তো জৈবিক কারণে সমকামী হয়, কেউবা মনস্তাত্ত্বিক কারণে। হোমোসেপুয়ালিটি, যার বাংলা হচ্ছে সমকামী। সমকামীরা এ সমাজেরই একটি বড় অংশ। তারা এ সমাজেই বাস করে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সমকামিতা বহু দেশে বৈধ নয়, কিন্তু অনেক দেশে সমকামী বিয়ে আইন চালু আছে এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

ঘটনা যেটা আমি বর্ণনা করব সেটা কিছুটা ভিন্ন। সুইডেনে যা বলেছি, প্রতি বছর এ সময় সপ্তাহব্যাপী আনন্দ-ফুর্তির সঙ্গে এরা এদের অস্তিত্ব বা অধিকারে যাতে কেউ হস্তক্ষেপ না করে তার জন্যই মূলত অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। ইদানীং কিছু সাধারণ ছেলে মেয়ে সেজে এ দলে যোগদান করে মেয়েদের তাঁবুতে রাত যাপন করে, পরে রাতের আঁধারে দেখা গেছে মেয়েদের ধর্ষণের চেষ্টা করে। 

আমরা শ্রেষ্ঠ জীব বলে দাবি করি, কিন্তু শ্রেষ্ঠ নৈতিকতা বা মানবতার পরিচয় দিতে পারছি বলে মনে হচ্ছে না। দেখুন কী হচ্ছে বিশ্বে, জ্বালানি তেলের দামসহ আন্তর্জাতিক বাজারে কী দুঃসহ একটা সময় এখন! নিজেসহ চেনা-পরিচিত বিপুল মানুষের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অনেক দেশের মানুষ সন্তান-পরিজনের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, লেখাপড়ার খরচ চালানোসহ কোনো কিছুই কুলিয়ে উঠতে পারছে না। মানুষ ভয়ানক কষ্টে আছে। অন্যদিকে, বন্যার পানির মতো লুটপাটের টাকা জমেছে বড় একটা গোষ্ঠীর পকেটে। তারা সারাদিন চারদিকে শুধু নিজেদের মতো মানুষদেরই দেখে। ফলে এদের ধারণা, চারপাশে শুধু সুখ আর প্রাচুর্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। যা অনেক মন্ত্রী ও তাঁর পারিষদদের বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে আপনি এই গোষ্ঠীর চিন্তার প্রতিফলনই পাবেন। যুদ্ধ বেধেছে কবে, আর এখন বিশ্বের অনেকের টনক নড়েছে। কারণ অনেক দেশের সরকার একটু একটু করে জ্বালানি খাতকে পরনির্ভরশীল করেছে শুধু একদল ব্যবসায়ী নামে ডাকাতের স্বার্থের কথা চিন্তা করে। পরিস্থিতি যখন শোচনীয় হয়ে উঠেছে, জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এদের জন্য খুব ভালো একটা ঢালের কাজ করছে। এই তেলের দাম বাড়ানোর ফল হবে- অনেক মানুষ বেঁচেই থাকতে পারবে না। ম্যাক্রো-ইকোনমি হয়তো রক্ষা পাবে; বলা হবে, রিজার্ভ আছে, মাথাপিছু আয় ভালো। আর এটার দায় দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। তাদের চামড়া, রক্ত, মাংস চুষে শেষ করে দেওয়া হবে। এতসব সমস্যার মধ্যেও সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে সপ্তাহ ধরে হয়ে গেল প্রাইড সেলিব্রেশন! অথচ বিশ্বে যুদ্ধ চলছে, মানুষ মরছে, তাতে কার কী যায় আসে! এখন আর আগের মতো কেউ রাস্তায় নামে না; বলে না যে যুদ্ধ বন্ধ করো। অথচ প্রাইড সেলিব্রেশনে শত শত মানুষ। চেয়ে চেয়ে দেখলাম, আমার বলার কিছু ছিল না!

আরও পড়ুন

×