ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আম্র নহে, ব্যবস্থাপনায় কীট

আম্র নহে, ব্যবস্থাপনায় কীট

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ | ১৯:৩১

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রযোজিত ‘রপ্তানিযোগ্য আম্র উৎপাদন’ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত আম্রচাষিগণ যেই বিপাকে পড়িয়াছেন, বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উহা স্পষ্ট। প্রচলিত চাষাবাদ ও বাজারজাতকরণে যেই চাষিরা মৌসুমে হেলাফেলা করিয়া অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় করিতেন; ‘রপ্তানিযোগ্য’ আম্র কীটের আক্রমণে ‘রপ্তানির অযোগ্য’ হইয়া পড়ায় এখন উৎপাদন খরচ উত্তোলনই দুঃসাধ্য। বোধগম্য কারণেই এই পরিস্থিতির দায় কেহ লইতে চাহিতেছে না। বাস্তবে দেখা যাইতেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের যেই চাষির সাত বৎসর পুরাতন বাগানে কখনোই কীটের আক্রমণ ঘটেনি; কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘ফর্মুলা’ মানিতে গিয়া সেই আম্রও এই মৌসুমে বহুলাংশে বিনষ্ট হইয়াছে। প্রকল্পের আওতাধীন কিছু বাগানে শুধু তদারকির ঔদাসীন্য নহে; সময়োচিত উদ্যোগের অভাব কিংবা দীর্ঘসূত্রতায় কিছু চাষি রপ্তানিযোগ্য আম্র উৎপাদনের পরও বিদেশে প্রেরণ করিতে পারেন নাই। আমরা মনে করি, সমগ্র পরিস্থিতির দায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকেই লইতে হইবে। চাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও পারস্পরিক দোষারোপের ডামাডোলে হারাইয়া যাওয়া চলিবে না।

বাংলাদেশের আম্র বিশ্ববাজারে রপ্তানিযোগ্য করিয়া তুলিতে প্রকল্প গ্রহণসহ প্রণোদনামূলক উদ্যোগে আমরা বরাবরই সমর্থন করিয়া আসিতেছি। বিশেষত ব্যক্তি উদ্যোগেই যখন কেহ কেহ ইউরোপ ও আমেরিকায় আম্র রপ্তানি করিতেছেন, তখন দেশের ১৫ জেলায় প্রায় সহস্র বাগানে রপ্তানিমুখী উৎপাদন ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিবার সরকারি প্রকল্প নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক ছিল। আমরা জানি, রসালো এই ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানের মধ্যে থাকিলেও রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে নাই। অথচ বিশ্বব্যাপী ছড়াইয়া থাকা বাঙালির নিকট পদ্মা-যমুনাতীরের আম্রের চাহিদা কম নহে। রপ্তানি না হইবার কারণে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সম্ভাবনা অনুন্মোচিত রহিতেছে, অপরদিকে চাষিও ন্যায্যমূল্য পাইতেছে না। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিস্থিতি যদি এইরূপ হয়, তাহা হইলে শুধু আম্র নহে; পাঁচ বৎসরের মধ্যে রপ্তানিমুখী চাষির সংখ্যা অষ্ট সহস্রাধিকে উন্নীত করিবার স্বপ্নও কীটের ভোগে লাগিবে। প্রকল্পের ‘মাত্র’ ৪৭ কোটি টাকাও গদাইলস্করিতে উড়াইয়া দিবার বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিকট কঠিন কর্ম হইতে পারে না।

সন্দেহ নাই, এইরূপ প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষক, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, গবেষক ও রপ্তানিকারকদের সমন্বয়ের অভাব দূর করিতেই হইবে। একই সঙ্গে রপ্তানির পথে প্রতিবন্ধক ও দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণ সম্ভব হইলে বেসরকারি খাতেও রপ্তানিমুখী উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা গড়িয়া উঠিবে। আম্র সংগ্রহ-পরবর্তী পর্যায়ে শনাক্তকরণের অভাব, প্যাকেজিংয়ের দুর্বলতা, ব্র্যান্ডিংয়ের অপ্রতুলতা প্রভৃতি লইয়া যেই ক্ষোভ ও আক্ষেপ বেসরকারি রপ্তানিকারকগণ সমকালের নিকট ব্যক্ত করিয়াছেন, ঐগুলি আমলে লইতেই হইবে।

ভারতের এক কেজি আম পরিবহনে উড়োজাহাজ ভাড়া ১০০ টাকা হইলেও আমাদের দেশে কেন উহা ১৬০-৭০ টাকায় পৌঁছাইবে– সেই প্রশ্নের উত্তরও সংশ্লিষ্টদের দিতে হইবে। একদিকে রপ্তানি বৃদ্ধি করিতে রাষ্ট্রীয় অর্থে প্রকল্প লইয়া আন্তরিকতা দেখানো হইবে না; অপরদিকে উদ্ভিদ সংগনিরোধ সনদের ন্যায় অতি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ায় অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা থাকিবে– ইহাও অআর্জনীয়।

আমরা জানি, বাংলাদেশের আম্র স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের দিক দিয়া অতুলনীয়। কিন্তু ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনায় যদি কীটের বাসা থাকে, তাহা হইলে উহা আম্রতেও সংক্রমিত হইতে বাধ্য।

আরও পড়ুন

×