ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

থাইল্যান্ড

রাজতন্ত্রবিরোধী থাকসিন আজ রাজতন্ত্র সমর্থক!

রাজতন্ত্রবিরোধী থাকসিন আজ রাজতন্ত্র সমর্থক!

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা

শন ডব্লিউ ক্রিসপিন

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

রাজনৈতিক উথালপাথালের মধ্যে থাইল্যান্ড নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল। বহুলাংশে পূর্বনির্ধারিত ছকে জাতীয় ঐক্যের নামে পুরোনো প্রতিপক্ষরা প্রাথমিকভাবে একজোট হয়েছে এবং নতুনভাবে উঠে আসা প্রগতিশীল শক্তিকে বিরোধী দলে ঠেলে দিয়েছে। ঐতিহাসিক এই পুনর্যাত্রার দিনে নাটকীয়ভাবে থাইল্যান্ডে ফিরে এসেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। তিনি সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। এক দশকের কারাবাস এড়াতে তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়েছিলেন এবং ১৫ বছর পর দেশে ফিরলেন। দেশে ফেরার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আশা করা যাচ্ছে, ৭৪ বছর বয়স্ক সাবেক টেলিকম টাইকুন থাকসিন কথিত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে সদয় আচরণ পাবেন। একই সঙ্গে রাজতন্ত্র সুরক্ষার যে গোপন চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে, তার আওতায় রাজকীয় ক্ষমাও পেতে পারেন তিনি। এই অবস্থায় থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে থাকসিন সিনাওয়াত্রার ফিউ পার্টির স্রেথা থাভিসিন জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের সামরিক জান্তার নিয়োগ দেওয়া সিনেটররা সাবেক এই রিয়েল এস্টেট টাইকুনকে বেছে নেন। যদিও তাঁর কোম্পানির নামে ভূমি চুক্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতিসহ কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে, যা তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের পথে শুরুতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত।

স্রেথার উত্থানের মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ডে নির্বাচনপরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হয়েছিল। সামরিক বাহিনী ও রাজতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানানো মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ফিউ পার্টি এর পর মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে ত্যাগ করে সামরিক বাহিনী সমর্থিত দল পালং প্রচারত ও ইউনাইটেড থাই ন্যাশন এবং রক্ষণশীলতা-সমর্থক ভুমজাইথাইকে জোট গঠনের আহ্বান জানায়। ফিউ থাই পার্টি তার পুরোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলায় এটা বলে যে, দেশের ‘স্থিতিশীলতার জন্য’ রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর সমর্থন প্রয়োজন। নির্বাচনের আগেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, পর্দার অন্তরালে রাজতন্ত্রপন্থি জেনারেলদের সঙ্গে থাকসিনের সমঝোতা হয়ে গেছে।

ফিউ থাই পার্টি দাবি করেছে, জোটবদ্ধ প্রতিটি দল তাদের এজেন্ডা ও কর্মসূচিকে সমর্থন করবে। এর মধ্যে জনপ্রিয় একটি ডিজিটাল ওয়ালেট স্কিম রয়েছে, যার আওতায় প্রত্যেক থাই নাগরিক ১০ হাজার বাথ (থাই মুদ্রা) উপহার পাবে। ২০২৭ সাল নাগাদ দৈনিক ন্যূনতম মজুরি প্রায় দ্বিগুণ করে ৬০০ বাথ করা হবে। সেনাবাহিনীর করা ২০১৮ সালের সংবিধানে দ্রুত গণতান্ত্রিক সংশোধনী আনা হবে।

এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির বিপরীতে ফিউ পার্টি কতটা সফল হবে? সাম্প্রতিক স্থানীয় জনমত জরিপ দেখাচ্ছে, নতুন নির্বাচন হলে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। অন্যদিকে পৃথক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ফিউ থাই-সামরিক জোট এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয়।

যদিও বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেন, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ২০২৪ সালের শুরুতেই অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। কারণ, দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। অভিযোগ হলো, দলটি থাইল্যান্ডের আইনের ১১২ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন বা বাতিলের ব্যাপক চেষ্টা করেছে। তার মানে, রাজতন্ত্র বাতিলের চেষ্টা। এটি থাইল্যান্ডের আইন অনুসারে রাষ্ট্রদ্রোহ। থাইল্যান্ডে এরই মধ্যে নতুন রাজনৈতিক আইন নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। ওই আইনে নিষিদ্ধ মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে নতুন দলের ব্যানারে দ্রুত পুনর্গঠন হতে বাধা দেবে। ২০২০ সালে তার পূর্বসূরি ফিউচার ফরওয়ার্ডের বিলুপ্তির পর তা যেমন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি করেছিল, সে পথ বন্ধের চেষ্টা হবে এই আইন।

থাকসিনের মূল দলের নাম ছিল থাই রাক থাই। বিভিন্ন সন্দেহজনক অভিযোগে আদালতে দলটি নিষিদ্ধ হয়। ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে থাকসিনও পর্যদুস্ত হন; শেষ পর্যন্ত তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। আরেকটি পরিহাস হলো, রক্ষণশীলরা থাকসিনকে রাজার জন্য হুমকি বলে অভিযুক্ত করেছিল। তাঁর কর্মকাণ্ডে রাজতন্ত্রবিরোধী উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি অভিযোগ ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করেছিলেন। এবার তিনি এবং তাঁর দল পিউ থাই রাজতন্ত্রের বিরোধী হিসেবে ভূমিকা পালন করার পরিবর্তে সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত। থাকসিনের ফেরাই এর প্রমাণ। পর্যবেক্ষকরা দেখেছেন, ব্যাংককে ডন মুয়াং বিমানবন্দরে মঙ্গলবার তিনি অবতরণ করেই প্রথম রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এবং রানী সুথিদার প্রতিকৃতির সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এটা এখনও অস্পষ্ট, থাকসিন সিনাওয়াত্রা এবং তাঁর দল ফিউ থাই কতটা রাজনৈতিক সমর্থন হারাবেন। ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী দিনে থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের পক্ষের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।

শন ডব্লিউ ক্রিসপিন: এশিয়া টাইমসের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্পাদক; এশিয়া টাইমস থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক

আরও পড়ুন

×