শুভ জন্মদিন
রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি

আবুল খায়ের
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:১৪
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক, সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য জননেতা তোফায়েল আহমেদের ৮১তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা জেলার কোড়ালিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আজহার আলী ও মা ফাতেমা খানম।
দেশ স্বাধীনের পর ’৭২-এর ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তোফায়েল আহমেদ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব নিযুক্ত হন। ’৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ঘোষণার পর প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় ‘রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী’ নিযুক্ত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী হন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁকে আটক ও অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘ ৩৩ মাস তিনি কারান্তরালে ছিলেন। ’৭৮-এ কুষ্টিয়া কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে সর্বমোট ৭ বার তিনি ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। এর মধ্যে সর্বমোট ৩ বার তাঁকে ফাঁসির আসামির কনডেম সেলে রাখা হয়।
১৯৭০-এ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ (পরে বাংলাদেশ গণপরিষদ), ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৮ বার তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে’ তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নবগঠিত সরকারে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এক-এগারো পরবর্তী দুঃসময়ে তাঁকে স্ত্রী-কন্যাসহ মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়। কিন্তু তবু তিনি অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার না করে দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের পাশে থেকেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘জীবন দেব, তবু বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী তোফায়েল আহমেদের মাতৃভক্তি অনুসরণীয়। ভোলা জেলার বাংলাবাজারে তাঁর মায়ের নামে তিনি স্থাপন করেছেন ‘ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স’। সেখানে স্থাপিত হয়েছে ফাতেমা খানম গার্লস হাই স্কুল; ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ; ফাতেমা খানম মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র; ফাতেমা খানম শিশু পরিবার; ফাতেমা খানম জামে মসজিদ; ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম। এখন নির্মাণকাজ চলছে আজহার-ফাতেমা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নবীন প্রজন্মের কাছে সমুন্নত রাখতে এই কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠা করেছেন দৃষ্টিনন্দন ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’।
স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ সহযোগী তোফায়েল আহমেদ দেশের চরম দুঃসময়ের কালপর্বে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে দুঃসাহসের প্রতীক। দেশবরেণ্য এই সংগ্রামী নেতার নীরোগ ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
- বিষয় :
- ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
- তোফায়েল আহমেদ