পিতার দাদনের বোঝা শিশু লইবে কেন?

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ০০:১৬
শনিবার সমকালে ‘দাদনের বোঝা শিশুর কাঁধে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে শিশুশ্রমের যে চিত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে উহা উন্নত দেশের কাতারে যাইতে আগ্রহী বাংলাদেশের ভাবমূর্তির সহিত সংগতিপূর্ণ নহে। যেই বয়সে শিশুরা স্কুলে যাওয়া কিংবা খেলার মাঠে সময় অতিবাহিত করিবার কথা সেইখানে তাহারা ইটভাটায় কাজ করিতেছে কেন? প্রতিবেদন মতে, কেবল রাজশাহীর চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার ২৭টি ইটভাটায় ৫৫০ জন শিশুশ্রমিককে কাজ করিতে দেখা গিয়াছে। এই স্থানীয় জরিপ হইতে সমগ্র দেশের উদ্বেগজনক চিত্র সহজে বুঝিতে পারা যায়। এই সকল শিশুর অভিভাবক যদি মহাজনের নিকট না যাইয়া প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হয়রানিমুক্ত ঋণ পাইত, তাহা হইলে এই সকল শিশুর গল্পগুলি ভিন্ন হইতে পারিত বৈকি।
প্রতিবেদনে উঠিয়া আসা এই চিত্র মর্মান্তিকও বটে– প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি এক ছাত্রকে দিনমজুর পিতার দাদনের অর্থ পরিশোধ করিতে ইটভাটায় কাজ করিতে হইতেছে। দেশজুড়িয়া এই প্রকার অযুত শিশু পাওয়া যাইবে, যাহারা পরিবারের ‘প্রয়োজনে’ কায়িক শ্রমে যুক্ত হইতে গিয়া বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে। অথচ সুষ্ঠু পরিচর্যা করিয়া তাহাদের অমূল্য মানবসম্পদ হিসাবে গড়িয়া তোলা যাইত। স্মরণে রাখিতে হইবে, অল্প বয়সে কায়িক শ্রমের কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিকভাবে সম্ভব হইতেছে না। এইরূপ সংকট জাতির উপর প্রজন্ম পরম্পরায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলিয়া যাইবে। নিশ্চয় আমরা ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে’ কথাটি ভুলিয়া যাই নাই। বর্তমানে শিশুদের যথাযথ যত্ন লইয়া গড়িয়া তুলিতে না পারিলে দেশের উন্নয়ন পোক্ত হইবে না।
আমরা জানি, ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন মোতাবেক, ১৪ বছরের নিম্নে কোনো শিশুকে কাজে নেওয়া যাইবে না। এই ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রায় ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের কথাও বলা হইয়াছে। পাশাপাশি সরকার শিশুশ্রম বন্ধের বিভিন্ন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়াছে। তবে, কেবল নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়া শিশুশ্রম বন্ধ করা যাইবে না। দারিদ্র্যকবলিত দেশে শিশুশ্রম থাকিবে না এমনটা রূপ দেওয়া কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সুচিন্তিত নীতিগ্রহণ করিয়া কঠোরভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হইলে এই সমস্যার নিরসন সম্ভব।
- বিষয় :
- দাদন