ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অচল ইভিএমের দায় কে লইবে?

অচল ইভিএমের দায় কে লইবে?

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৪৩

ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রচলন-সংক্রান্ত প্রকল্পটি যে রূপ পরিগ্রহ করিয়াছিল, ফলস্বরূপ উহা বন্ধ হওয়াই ছিল ভবিতব্য। প্রকল্প সচল কিংবা অচল হইবার দৃষ্টান্ত এই পোড়ার দেশে নেহাত কম নহে। কিন্তু ইতোমধ্যে আড়াই সহস্র কোটি টাকা গচ্চা যাইবার পর আলোচ্য প্রকল্পকে অন্যগুলির সহিত মিলাইবার অবকাশ সামান্য। বস্তুত প্রকল্পের পরিণতিই প্রমাণ করে– উহা দূরদর্শী ছিল না। কাহার স্বার্থে কিংবা অবিমৃষ্যকারিতায় এই প্রকার প্রকল্প গৃহীত হইয়াছিল, বিলম্বে হইলেও উহা খতাইয়া দেখা উচিত।

মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দেড় লক্ষ ইভিএম ক্রয় করিয়াছিল। বিস্ময়কর হইলেও সত্য, যে মেশিন ক্রয় করিতে ভারতের ব্যয় হইয়াছিল ২২ সহস্র টাকা; প্রায় একই প্রকার ইভিএম তৈয়ারে বাংলাদেশের ব্যয় হইয়াছিল ২ লক্ষ ৩৫ সহস্র টাকা। তখন নির্বাচন কমিশনের তরফ হইতে মেশিনগুলিকে উন্নতমানের বলিয়া দাবি করিলেও ১০ বৎসর মেয়াদি এই ইভিএম পাঁচ বৎসর অতিক্রান্ত না হইতেই দম হারাইতে শুরু করে। দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে অধিকাংশই এখন ব্যবহারযোগ্য নহে এবং উহা মেরামতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হইবে তাহারও জোগান নাই। প্রায় এক বৎসর পূর্বে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছিল, প্রতিটা ইভিএম মেরামতেই ব্যয় হইবে লক্ষাধিক টাকা। এই কারণেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা থাকিলেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। ফলে চলতি বৎসরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হইবা মাত্র ইভিএমেরও যবনিকাপাত ঘটিবার শঙ্কা প্রকাশমান। এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশন সরকারকে পত্র দিয়া প্রকল্পের ভবিষ্যৎ জানিতে চাহিবে। 

আমরা দেখিয়াছি, সূচনা হইতেই ইভিএম প্রকল্প লইয়া বিতর্ক দানা বাঁধিয়ছিল। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ‘উপহার’ দিবার জন্য তড়িঘড়ি করিয়া গৃহীত প্রকল্পে চার সহস্র কোটি টাকা ব্যয় হইলেও স্থানীয় সরকারের যে সকল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হইয়াছিল, সেইগুলির ফল লইয়াও বিতর্ক কম হয় নাই। বস্তুত ইভিএম প্রকল্প গ্রহণকালেই অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কারিগরি কমিটি ইভিএমে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল-ভিভিপিএটি সুবিধা তৈরির সুপারিশ করিয়াছিল, যাহাতে যন্ত্রে ভোটদানের পর তাহা কাগজে মুদ্রিত হইবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন উহা বাদ দিয়াই ইভিএম ক্রয় করিয়াছিল। যে কারণে ইভিএম প্রকল্পে জনআস্থার ঘাটতি দেখা দিয়াছিল। ইভিএম নষ্ট হইবার নেপথ্যে সংরক্ষণ- সংক্রান্ত অবহেলাও গুরুতর ভূমিকা পালন করিয়াছে। 

এখন আমাদের বিনীত প্রশ্ন, জনসাধারণের আড়াই সহস্র কোটি টাকা গচ্চার দায় কে লইবে? নির্বাচন কমিশন কি প্রস্তুত? ইহা সত্য, প্রকল্পের উদ্যোক্তা কমিশন ইতোমধ্যে মেয়াদ শেষ করিয়া অবসরে গিয়াছে। কিন্তু অবসরে গেলেই যে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের জবাবদিহি করা যাইবে না– এমন বিধান কোন শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে?

আরও পড়ুন

×