ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শিশু নির্যাতনকারীদের ছাড় নহে

শিশু নির্যাতনকারীদের ছাড় নহে

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪ | ০০:৪৬

চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে নোয়াখালীতে যেইভাবে শিশুচতুষ্টয়কে নিদ্রা হইতে তুলিয়া লইয়া নির্যাতন করা হইয়াছে, উহা উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। ঠুনকো অজুহাতে প্রায়শ এইভাবে শিশু-কিশোর নিপীড়ন মানিয়া লওয়া যায় না। ইতোপূর্বে এহেন নির্যাতনে এমনকি প্রাণহানি ঘটিলেও কাহারও মধ্যে বিকার না থাকিবার বিষয়টিও গভীরভাবে ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই সকল খবর সংবাদমাধ্যমে পৌঁছায় না। কিন্তু শিশু-কিশোর নির্যাতনের যৎসামান্য পাওয়া যায়, উহা যেই কোনো সভ্য সমাজের জন্য ভয়াবহ হইতে বাধ্য। 

সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার রাত্রিতে নোয়াখালীর সেনবাগে জনৈক খোরশেদের শূন্য গৃহে চুরি সংঘটিত হয়। তিনি ঐ সময় ঢাকায় অবস্থান করিতেছিলেন। গৃহে ফিরিয়া তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে লইয়া আলোচ্য চার কিশোরকে তুলিয়া আনিয়া চৌর্যবৃত্তির স্বীকারোক্তির জন্য হাতুড়ি ও ধাতব নল দিয়া এলোপাতাড়ি প্রহার করেন। এমনকি প্লাইয়ার্স দিয়া নখ উৎপাটনের অপচেষ্টা করিলে কিশোরদের চিৎকারে স্বজনরা জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করিতে বাধ্য হন। এমতাবস্থায় পুলিশ আসিয়া উহাদের উদ্ধার করে। যদিও এহেন ভয়াবহ নির্যাতনের পরও খোরশেদসহ সংশ্লিষ্টরা গ্রেপ্তার হন নাই। পুলিশের বক্তব্য, স্থানীয় কাউন্সিলর মীমাংসার দায়িত্ব লইয়াছেন।

আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে দুই দফা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়াছে। প্রথমত, চৌর্যবৃত্তি ঘটিয়া থাকিলে উহার বিধিবদ্ধ ব্যবস্থার জন্য দেশে আইন-আদালত রহিয়াছে। সন্দেহবশত পেশিশক্তিতে কাহাকেও তুলিয়া লইয়া নির্যাতন চলিতে পারে না। এমনকি অকুস্থলে বমাল ধরা পড়িবার পরও শারীরিক নির্যাতন আইনসিদ্ধ নহে। দ্বিতীয়ত, বেআইনিভাবে নির্যাতনকারীকে পুলিশ কাউন্সিলের হস্তে ছাড়িয়া দিবে কেন? আলোচ্য ক্ষেত্রে সন্দেহাতীতভাবেই ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত ঘটিয়াছে। নির্যাতনের সহিত জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনাই পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এইরূপ কর্তব্য পরিহারের নেপথ্যে নগদ নারায়ণের ভূমিকা রহিয়াছে কিনা, খতাইয়া দেখা জরুরি।
আমরা দেখিয়াছি, নিছক মশকরার নামেও ইতোপূর্বে শিশুদের উপর নির্মম নির্যাতন চলিয়াছে। চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে নিপীড়ন ক্রমেই বাড়িয়া চলিয়াছে। এই প্রবণতা বৃদ্ধির নেপথ্যে পুলিশের ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত ঔদাসীন্য যে বহুলাংশে দায়ী– নোয়াখালীর সেনবাগে উহা আরেকবার প্রমাণ হইল। বিলম্বে হইলেও আমরা দেখিতে চাহিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ শিশু-কিশোর নির্যাতনকারীদের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাইতেছেন।

আরও পড়ুন

×