বাংলাদেশ কবে একটি অলিম্পিক পদক জিতবে

রহমান মৃধা
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২১ | ০১:৫১ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২১ | ০১:৫১
সম্প্রতি সুইডেনের সব মিডিয়ায় যে নিউজটির হেডিং আমার হৃদয় ছুঁয়েছে সেটা হলো- 'জিতেছেন বারবার বিশ্বসেরা সারাহ সোস্ট্রাম।' ভাঙা কনুই সত্ত্বেও সিলভার জিতেছেন সাঁতারে। এটা ছিল বিশাল নিউজ। অলিম্পিক খেলা মাঝেমধ্যে দেখেছি। এবারের অলিম্পিকে সুইডেন পোল জাম্প এবং ডিসকাসে স্বর্ণপদক জিতেছে, মেয়েদের ফুটবলে সিলভার পদক জিতেছে। তা ছাড়াও ওবেরয় কিছু পদক জিততে পেরেছে। ছোট একটি দেশ বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। তা সত্ত্বেও তারা সব বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে এবং অনেক পদক জিতেছে।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নানা সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বড় সমস্যা হলো প্রতিভাবানদের হতাশার মধ্যে ডুবে মারা। কারণ সঠিকভাবে প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর মতো যোগ্য ব্যক্তির অভাব রয়েছে। দেশের বড় পদগুলো যারা দখল করে মাসে মাসে বেতন তুলছে, তারা জানে না তাদের দায়িত্ব কী? যারা দায়িত্ব দিবে তারাও জানে না কী করতে হবে। সব মিলে হাওয়ালে বৃন্দাবন।
ইদানীং অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, অলিম্পিকে পদক না জেতা সবচেয়ে জনবহুল দেশটির নাম কী? উত্তর- বাংলাদেশ। জনসংখ্যা বা আয়তনের ভিত্তিতে সবসময় পদক আসে না অলিম্পিকে, আবার আসে। যেমন চীন এ বছর সবচেয়ে বেশি পদক পেয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত তেমন কোনো আশানুরূপ ফলাফল দেখাতে পারেনি।
বাংলাদেশ কবে একটি অলিম্পিক পদক জিতবে- এমনটি ভাবনা আসতেই পারে সবার মনে। সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদদের ধরে রাখতে হলে তাদের দিতে হবে জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা। সেটা কি দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে? তা ছাড়া দেশে খেলাধুলার সংস্কৃতিও হারিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত; কিন্তু ক্রিকেট বাদে নিজ দেশের অন্য খেলাধুলা নিয়ে অনাগ্রহ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে।
দেশের ক্রীড়া প্রশাসনকে বুঝতে হবে, অলিম্পিকে একটি পদক জেতা অনেকটা হিমালয়ের সর্বোচ্চ পাহাড়ে উঠার মতো। তাই অনেক বেশি চেষ্টা করা দরকার। শুধু অলিম্পিকে দলবেঁধে গেলাম আর পরাজিত হয়ে ফিরে এলাম- এভাবে চলতে পারে না অনির্দিষ্টকাল ধরে। যদিও বলা হয়, অলিম্পিকের মূলমন্ত্র জয়লাভ নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা। তার পরও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণই বড়- এ কথার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছ। সেটার দিকে কড়া নজর দিতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে চলছে রাজনৈতিক শক্তির দৌরাত্ম্য। দেশে চলছে একনায়কতন্ত্র শাসন। যার ফলে কোথাও প্রতিযোগিতার চিহ্নমাত্র নেই। এভাবে চলতে থাকলে দেশের পরিকাঠামো একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
অনেক অযোগ্য ব্যক্তি ফেডারেশনের চেয়ার দখলে রেখেছে। ফলে খেলাধুলায় উন্নতি নেই। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসেই বাংলাদেশ এখনও পেছনের বেঞ্চের সারিতে, অলিম্পিক তো অনেক দূরের পথ। যদিও বাংলাদেশসহ ৫০টির বেশি দেশ আজও পারেনি অলিম্পিকে পদক জিততে। তার পরও আমরা স্বপ্টম্ন দেখতে শুরু করতে পারি।
যদি বলি ২০২৮ অলিম্পিকে আমরা সোনা জিততে চাই। আমার আশা আর বাস্তবতার মধ্যে দুর্ভেদ্য কোনো প্রাচীর রয়েছে এমনটিই বলবে সবাই।
আমি মনে করি, এই প্রাচীর নিশ্চয়ই ভাঙা সম্ভব। তবে হয়তো ২০২৮ নয়, আরও সময় লাগতে পারে। দরকার শুধু একটা মহাপদক প্রকল্প হাতে নেওয়া। যেমনটা ২০১০ সালে দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলনের ব্যবস্থা করায় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে তিন থেকে এক লাফে ১৮টি সোনা জেতে বাংলাদেশ। অলিম্পিকে পদক জয়ের এমন একটা উদ্যোগ নিলে এক সময় ফল আসতে বাধ্য।
ফাইজার, সুইডেন
ৎধযসধহ.সৎরফযধ@মসধরষ.পড়স
- বিষয় :
- চতুরঙ্গ
- রহমান মৃধা