শ্রদ্ধাঞ্জলি
শিক্ষা ও সাহিত্যের নিমগ্ন সাধক

হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১)
এ এন রাশেদা
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ | ১২:০০
হাসান আজিজুল হক ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষ ভাগের সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে এসেছিলেন সেই বীভৎসতা, অমানবিকতা, আগুনের লেলিহান শিখার দগদগে স্মৃতি বহন করে। আবার দেখেছেন ১৯৭১-এর নির্মমতা। ১৯৭৫-এ একাত্তরে অর্জিত আলোর অস্তগামী রশ্মি দেখে বিচলিত হয়েছি আমরা। হাসান আজিজুল হক চিন্তার জগতের বন্ধু, অনুরাগীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে একটি সাম্যের মৈত্রীর সমাজের আকাঙ্ক্ষা করেছেন। সে সমাজ আলো ছড়াবে শিক্ষা-সংস্কৃতিকে ধারণ করে, লালন করে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর হবে; সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে। '৭২-এর সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে, মনেপ্রাণে কায়মনোবাক্যে চেয়েছিলেন তিনি। প্রকৃত অর্থে এর অবর্তমানে কী হতে পারে, তা বিভিন্নভাবে বলেছেন।
তিনি একুশের উল্টোপথে যাত্রার কথা বলেছেন। বিধ্বস্ত অচল শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলেছেন। নির্যাতন ও শোষণমূলক বিকারগ্রস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাই যে আজকের এই অচল শিক্ষাব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে- সে কথা বলেছেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সেমিনার পর্বে লিখিত প্রবন্ধে শিক্ষাব্যবস্থার করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেছেন : 'ডাক্তারি মতে ক্লিনিক্যালি জীবিত বলে রোগীর যে অবস্থাটা বোঝানো হয়, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাটা ঠিক তাই। মৃত্যুর সব চিহ্ন প্রকট, সর্বশরীর অসাড়, সর্ব ইন্দ্রিয় নিষ্ফ্ক্রিয়, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াহীন, তবু মৃত্যু ঘটেছে বলা যায় না। গোটা দেশজুড়ে বিরাট একটা কাঠামো পড়ে আছে, গল্পের দানবের মতো। যে দেশের একজন নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষায় ঢুকে উচ্চশিক্ষার ভেতর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বেরিয়ে আসতে পারেন শিক্ষা নামক বস্তুটি দ্বারা এতটুকু স্পর্শিত না হয়ে। মানুষকে এমন চরম অপদার্থ ও অকর্মণ্য বানানোর কারখানা দুনিয়ার আর কোথায় আছে আমার জানা নেই। উৎপাদনব্যবস্থা থেকে সরে থাকা, নিরক্ষর আশিভাগের ওপর নির্ভরশীল পরগাছা একটি শ্রেণি তৈরি হচ্ছে।'
আজ থেকে ৩০ বছর আগের একটি নিবন্ধের এই উদ্ৃব্দতিটুকুর মধ্য দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার ভয়ংকর অন্তঃসারশূন্য রূপ যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি আজন্ম লালিত সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের পথ থেকে যে দেশ সরে আসছে এবং যা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারও ছিল- তা তিনি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছিলেন পরগাছা শ্রেণির উদ্ভবের মধ্য দিয়ে। আজ তেরো বছর ধরে একটানা বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং তার দল রাষ্ট্রক্ষমতায়। অথচ আমরা দেখছি, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিসহ সব রকম কদাচারের ঘোলা জলে নিমজ্জিত। এর মধ্যে কয়েকজনকে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য অপসারণও করা হয়েছে। আবার সব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাধারণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সর্বত্র ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রধারী এবং যুদ্ধংদেহী। প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এই যদি হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- তাহলে শিক্ষা কোথায়? শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হকের ভাষায় 'ক্লিনিক্যালি ডেড', যা এখনও লাইফ সাপোর্টেই আছে অথবা সত্যিকার অর্থেই মৃত। এর বহু উদাহরণ দেওয়া যায়।
হাসান আজিজুল হক, এই স্বনামখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, যখন রাজশাহী জেলায় বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটি গঠিত হয়েছিল শাহ মুখদুম কলেজে। পরে আবার দেখা হয় ওই সমিতির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সম্মেলনে। প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. খান সারওয়ার মুরশিদ। সভাপতিত্ব করেছিলেন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত বন্ধুবৎসল। প্রগতিমনা।
১৯৯৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের কথা। শিক্ষাবার্তার পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল 'শিক্ষাদর্শন :লক্ষ্য ও সমাজ' শীর্ষক দিনভর সেমিনার। স্থান : জয়নুল আবেদিন অডিটোরিয়াম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। হাসান আজিজুল হক সভাপতির ভাষণের একপর্যায়ে বলেন- 'তবে এটা বলা চলে যে, দু-দুবার স্বাধীনতার পরে নতুন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার কথা ছিল। অবশ্য প্রথম স্বাধীনতাটি আগাপাশতলা মেকি ছিল বলা চলে, উপনিবেশ থেকে উপনিবেশ, তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল জাতিগত নিশ্ছিদ্র শোষণ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পুরোটাই ইসলামের নামে ধোঁকাবাজিতে চালানো হয়েছিল। পাকিস্তানি আমলে এটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না যে, ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থা নতুন পাকিস্তানি উপনিবেশে মৌলিকভাবে বদলাবে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পরেও একই ব্যবস্থা চালু থাকবে এটা কিছুতেই কারও প্রত্যাশিত ছিল না।' ১৯৯৬-এর ২০ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছিলেন, শিক্ষাব্যবস্থাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এখনকার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, শিক্ষাব্যবস্থার কবর রচিত হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা বহাল রাখার জন্য বোর্ড গঠন করাই তার প্রমাণ। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক দেখেছেন জন্মভূমি ছেড়ে আসা মানুষদের। তাদের হাহাকার-বেদনা- তাই তার গল্প-উপন্যাসের মধ্যে ব্যক্ত করেছেন, সমাজের বীভৎসতা তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে।
শিক্ষক হাসান আজিজুল হকের শিক্ষাভাবনা, সমাজ ও দেশ ভাবনার সামান্য অংশবিশেষ তুলে ধরছি মাত্র। ২০১৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি সমকালের বিশেষ সংখ্যায় 'উপসংহার বলে কিছু নেই' শিরোনামে তিনি লিখেছেন :'... একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা মানুষের মধ্যে যে কাজ করবে, সেটা কীভাবে? আজকে ছয় দশক পর কাজ করলে, তবেই না আগামীতে করবে, ... এসব কিছু নিয়ে একটা গোলমেলে সাংস্কৃতিক অবস্থা বিরাজ করছে। এর সঙ্গে অর্থনীতির কোনো সাযুজ্য নেই, শিক্ষার কোনো মিল নেই। হতাশা ছাড়া আর কিছু নেই। আমি কোনো আশার আলো দেখছি না। কারণ এখানে যা কাজ হচ্ছে, তাতে চেতনা সংক্রান্ত কোনো রকম পরিকল্পনা নেই। চেতনা আছে শুধু কিছু বুলি আওড়ানো আর টকশোর আস্ম্ফালনে। তবু কিচ্ছু হবে না- এ কথা আমার নয়। একটা দেশের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে না চাইলে এবং চাইলে- দু'ক্ষেত্রেই প্রথম কাজ হচ্ছে 'শিক্ষা'। শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক, সমাজ ভাবুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, সাহসী চিন্তাবিদ, লড়াকু চেতনায় সমৃদ্ধ শিক্ষা ও সাহিত্যের নিমগ্ন এই সাধককে প্রণতি।
এ এন রাশেদা : সাবেক অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ
তিনি একুশের উল্টোপথে যাত্রার কথা বলেছেন। বিধ্বস্ত অচল শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলেছেন। নির্যাতন ও শোষণমূলক বিকারগ্রস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাই যে আজকের এই অচল শিক্ষাব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে- সে কথা বলেছেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সেমিনার পর্বে লিখিত প্রবন্ধে শিক্ষাব্যবস্থার করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেছেন : 'ডাক্তারি মতে ক্লিনিক্যালি জীবিত বলে রোগীর যে অবস্থাটা বোঝানো হয়, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাটা ঠিক তাই। মৃত্যুর সব চিহ্ন প্রকট, সর্বশরীর অসাড়, সর্ব ইন্দ্রিয় নিষ্ফ্ক্রিয়, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াহীন, তবু মৃত্যু ঘটেছে বলা যায় না। গোটা দেশজুড়ে বিরাট একটা কাঠামো পড়ে আছে, গল্পের দানবের মতো। যে দেশের একজন নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষায় ঢুকে উচ্চশিক্ষার ভেতর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বেরিয়ে আসতে পারেন শিক্ষা নামক বস্তুটি দ্বারা এতটুকু স্পর্শিত না হয়ে। মানুষকে এমন চরম অপদার্থ ও অকর্মণ্য বানানোর কারখানা দুনিয়ার আর কোথায় আছে আমার জানা নেই। উৎপাদনব্যবস্থা থেকে সরে থাকা, নিরক্ষর আশিভাগের ওপর নির্ভরশীল পরগাছা একটি শ্রেণি তৈরি হচ্ছে।'
আজ থেকে ৩০ বছর আগের একটি নিবন্ধের এই উদ্ৃব্দতিটুকুর মধ্য দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার ভয়ংকর অন্তঃসারশূন্য রূপ যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি আজন্ম লালিত সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের পথ থেকে যে দেশ সরে আসছে এবং যা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারও ছিল- তা তিনি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছিলেন পরগাছা শ্রেণির উদ্ভবের মধ্য দিয়ে। আজ তেরো বছর ধরে একটানা বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং তার দল রাষ্ট্রক্ষমতায়। অথচ আমরা দেখছি, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিসহ সব রকম কদাচারের ঘোলা জলে নিমজ্জিত। এর মধ্যে কয়েকজনকে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য অপসারণও করা হয়েছে। আবার সব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাধারণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সর্বত্র ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রধারী এবং যুদ্ধংদেহী। প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এই যদি হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- তাহলে শিক্ষা কোথায়? শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হকের ভাষায় 'ক্লিনিক্যালি ডেড', যা এখনও লাইফ সাপোর্টেই আছে অথবা সত্যিকার অর্থেই মৃত। এর বহু উদাহরণ দেওয়া যায়।
হাসান আজিজুল হক, এই স্বনামখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, যখন রাজশাহী জেলায় বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটি গঠিত হয়েছিল শাহ মুখদুম কলেজে। পরে আবার দেখা হয় ওই সমিতির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সম্মেলনে। প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. খান সারওয়ার মুরশিদ। সভাপতিত্ব করেছিলেন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত বন্ধুবৎসল। প্রগতিমনা।
১৯৯৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের কথা। শিক্ষাবার্তার পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল 'শিক্ষাদর্শন :লক্ষ্য ও সমাজ' শীর্ষক দিনভর সেমিনার। স্থান : জয়নুল আবেদিন অডিটোরিয়াম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। হাসান আজিজুল হক সভাপতির ভাষণের একপর্যায়ে বলেন- 'তবে এটা বলা চলে যে, দু-দুবার স্বাধীনতার পরে নতুন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার কথা ছিল। অবশ্য প্রথম স্বাধীনতাটি আগাপাশতলা মেকি ছিল বলা চলে, উপনিবেশ থেকে উপনিবেশ, তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল জাতিগত নিশ্ছিদ্র শোষণ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পুরোটাই ইসলামের নামে ধোঁকাবাজিতে চালানো হয়েছিল। পাকিস্তানি আমলে এটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না যে, ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থা নতুন পাকিস্তানি উপনিবেশে মৌলিকভাবে বদলাবে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পরেও একই ব্যবস্থা চালু থাকবে এটা কিছুতেই কারও প্রত্যাশিত ছিল না।' ১৯৯৬-এর ২০ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছিলেন, শিক্ষাব্যবস্থাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এখনকার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, শিক্ষাব্যবস্থার কবর রচিত হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা বহাল রাখার জন্য বোর্ড গঠন করাই তার প্রমাণ। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক দেখেছেন জন্মভূমি ছেড়ে আসা মানুষদের। তাদের হাহাকার-বেদনা- তাই তার গল্প-উপন্যাসের মধ্যে ব্যক্ত করেছেন, সমাজের বীভৎসতা তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে।
শিক্ষক হাসান আজিজুল হকের শিক্ষাভাবনা, সমাজ ও দেশ ভাবনার সামান্য অংশবিশেষ তুলে ধরছি মাত্র। ২০১৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি সমকালের বিশেষ সংখ্যায় 'উপসংহার বলে কিছু নেই' শিরোনামে তিনি লিখেছেন :'... একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা মানুষের মধ্যে যে কাজ করবে, সেটা কীভাবে? আজকে ছয় দশক পর কাজ করলে, তবেই না আগামীতে করবে, ... এসব কিছু নিয়ে একটা গোলমেলে সাংস্কৃতিক অবস্থা বিরাজ করছে। এর সঙ্গে অর্থনীতির কোনো সাযুজ্য নেই, শিক্ষার কোনো মিল নেই। হতাশা ছাড়া আর কিছু নেই। আমি কোনো আশার আলো দেখছি না। কারণ এখানে যা কাজ হচ্ছে, তাতে চেতনা সংক্রান্ত কোনো রকম পরিকল্পনা নেই। চেতনা আছে শুধু কিছু বুলি আওড়ানো আর টকশোর আস্ম্ফালনে। তবু কিচ্ছু হবে না- এ কথা আমার নয়। একটা দেশের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে না চাইলে এবং চাইলে- দু'ক্ষেত্রেই প্রথম কাজ হচ্ছে 'শিক্ষা'। শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক, সমাজ ভাবুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, সাহসী চিন্তাবিদ, লড়াকু চেতনায় সমৃদ্ধ শিক্ষা ও সাহিত্যের নিমগ্ন এই সাধককে প্রণতি।
এ এন রাশেদা : সাবেক অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ
- বিষয় :
- শ্রদ্ধাঞ্জলি
- এ এন রাশেদা
- হাসান আজিজুল হক