ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ওরা উজ্জ্বল সময়ের সঙ্গী

ওরা উজ্জ্বল সময়ের সঙ্গী

[বাঁ থেকে] সারিকা সাবা, সঞ্চিতা দত্ত ও সারওয়াত আজাদ বৃষ্টি -ছবি রাজিব পাল

আশিক মুস্তাফা

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ | ০৪:৩৯ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ | ০৫:১৭

সারিকা সাবা। সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ফেসবুকে স্ট্ক্রল করলেই চোখে পড়ে তার অভিনীত নাটকের খণ্ডাংশ। ফ্যামিলি ক্রাইসিস এবং ফেসবুক তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে ঝুমুর নামে। ২৬ জানুয়ারি নন্দনের আমন্ত্রণে সারিকা সাবা এসেছিলেন সমকাল কার্যালয়ে। সঙ্গে ছিলেন ২০১৮ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে প্রথম রানারআপ হওয়া সারওয়াত আজাদ বৃষ্টি এবং মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৭-এর দ্বিতীয় রানারআপ সঞ্চিতা দত্ত

তেজগাঁওয়ে টাইমস মিডিয়া ভবনের ছাদে ঝকঝকে রোদ। শীতের এই আলোমাখা রোদের বড্ড ক্ষমতা, আপন করে নেওয়ার। আর ছাদের সবুজ ঘাস? সে তো টেনে নিয়ে যায় গ্রামের আলপথে। নস্টালজিক করে দেয় মন। ঘাসের গায়ে পা রেখে সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী সারিকা সাবা আনমনা হয়ে বলেন, 'জানেন, আমার বেড়ে ওঠা যৌথ পরিবারে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি তবু ভাই-বোনের অভাব ছিল না। রংপুরের ডিএল রায় রোডের বাড়ি থেকে দলবেঁধে আমরা প্রায়ই গ্রামে যেতাম। সবুজের খোঁজে। হাঁটতাম আলপথ ধরে। কত ছোটাছুটি করেছি গ্রামের পথেঘাটে...!' তার মুখ থেকে কথা টেনে নেন নজরুলের কাব্যগ্রন্থ থেকে উঠে আসা সঞ্চিতা দত্ত। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ এই মডেল-অভিনেত্রী বলেন, 'এমন রোদের দিনে আমরা রোদফুলের খোঁজে আমবাগানে ঘুরতাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে দত্তবাড়ির বিশাল আমবাগান। শীতের সোনালি রোদ বাবার লাগানো আমগাছের ডাল আর পাতার ফোকর গলে পড়ত মাটিতে। তারপর ফুল হয়ে ফুটে থাকত মাটির গায়ে। হুমায়ূন আহমেদের জোছনার ফুলের মতো রোদের ফুল। সেকি ভালো লাগা!' ওদিকে শীতের হিমেল বাতাস খেলা করে বৃষ্টির চুলে।

লাক্স সুপারস্টার ২০১৮-এর প্রথম রানারআপ সারওয়াত আজাদ বৃষ্টি মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে বলেন, 'টমাস হার্ডির বিখ্যাত টেস অব দ্য ডারবারবিলস উপন্যাসের কথা মনে পড়ছে।' বললাম, 'রোমান পোলানস্কি কিন্তু এই উপন্যাস ধরে সিনেমা বানিয়েছেন। বৃষ্টি বলেন, 'সিনেমাটি দেখা হয়নি। তবে উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। ওই যে গাছগুলো দেখছেন [হাতের ইশারায় পাশের আরেকটি ছাদ বাগান দেখিয়ে বলেন], এসব গাছের নিচ দিয়ে যেন উপন্যাসের নায়িকা টেস ঘোড়ায় ছুটছে শহরে বেড়ে ওঠা তার বংশের একমাত্র যুবকটির সঙ্গে।' বললাম, আপনার ছুটতে ইচ্ছে করে এমন কোনো যুবকের সঙ্গে?

হেসে উঠে বলেন, 'ক্যামেরার সামনে হলে আপত্তি নেই। আবু হায়াত মাহমুদের প্রিয় প্রতিবেশী নামে এমন একটি নাটকে কাজ করেছি। অচিরেই দেখা যাবে চ্যানেল আইতে। সেখানে এমন কোনো প্রতিবেশী আছে কিনা তা বলব না। রহস্যটা তোলা থাক দর্শকদের জন্য। তবে বাস্তব জীবনে এখনও পাইনি এমন কাউকে।' পাশ থেকে সারিকা বলেন, 'আসলে আমরা একেকজন একেকটা স্বপ্ন নিয়ে শহরে আসি। সেই স্বপ্নের পথে ছুটতে গেলে এসবে মন দেওয়া যায় না তেমন। আমার কাজিন বৃষ্টির খুব কাছের বন্ধু। তার কাছ থেকে জেনেছি বাবার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সে এসেছে অভিনয়ে। যদিও মা আর মামাদের কাছ থেকে পেয়েছেন আস্কারা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখায় পড়াকালীন মা-মামা মিলে তাকে ভর্তি করে দেন বাফায়। আনিসুল ইসলাম হিরু ভাইয়ের সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার থেকেও নিয়েছে নৃত্যের তালিম...।'

বলতেই থাকলেন সারিকা। ভাবুক মানুষের মতো মুখে হাত ঠেকিয়ে বৃষ্টি বলেন, 'আর কী কী জানো আমার সম্পর্কে শুনি?' সারিকা হেসে উঠে বলেন, 'জানি, আরও অনেক জানি, এই যে তুমি মার্শাল আর্ট জানো- সে কথা কি আমি বলেছি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়ন করছ, সে কথাও তো বলিনি। বলব না, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমরি বাংলা ভাষা নামে যে নাটকটি করছ তার কথা। আর তোমার যে টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস আছে সে কথা নাইবা বললাম।' এই বলে হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ে লুটিয়ে পড়েন। গুনগুনিয়ে গান ধরেন সঞ্চিতা, 'তোর বর্ষা বিকেল, মনে আমি...।'

'নট এ লাভ স্টোরি' শিরোনামের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য মায়ার শরীর কণ্ঠে তুলেছেন সঞ্চিতা। চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগেই গান ছাড়া হয়েছে লায়নিক মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে। এটুকু বয়স থেকেই মায়ের কাছে সংগীতের পাঠ সঞ্চিতার। মা রবীন্দ্রসংগীত বলতেই বুঁদ। রান্না থেকে ঘুম; সবসময় অনবরত চলত রবীন্দ্রসংগীত। সেই থেকে সঞ্চিতাও রবীন্দ্রনাথে পড়ে আছেন যেন! তবে অভিনয়ের ভূতও মাথায় চেপেছে ছোটবেলা থেকে। সঞ্চিতা বলেন, 'রাজশাহী থেকে এলএলবি শেষ করে অভিনয়ের টানে আসি ঢাকায়। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হয়ে অভিনয়ের গলিপথটা ছুটাই হাইওয়ের দিকে! 'সন্দেহ ভাইরাস' নামে দীপ্ত টিভির ১৪০ পর্বের একটি ধারাবাহিক করি। নাগরিক টেলিভিশনে প্রচারিত 'বাঙ্গি টেলিভিশন'ও আমার পছন্দের একটি কাজ। এ ছাড়া আমার 'ভাইজান' এবং 'দি মাদার' শর্টফিল্ম দুটি প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন ফিল্মফেস্টে। আরটিভিতে যাচ্ছে 'তবুও তুমি' নাটকটি। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সঙ্গে জুটি বেঁধেছি 'নন্দিনী' চলচ্চিত্রে। নেপাল যাচ্ছি সাইকো সিনেমার শুটিংয়ে। অনন্য মামুন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের দুই পর্বের শুটিং শেষ করেছি উত্তরা ও চট্টগ্রামে। ২০২০ সালেই মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রটি।'

সারিকা সাবাকে মনে করিয়ে দিলাম তার ঝুমুর চরিত্রের কথা। তিনি বলেন, 'এই একটি চরিত্রই আমাকে অভিনয়ে থাকার স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে গেলে ঝুমুর ডাক শুনি। ঢাকার বাইরে এই নাম আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। শৈশবের রংপুরে ঝুমুর এখন আলোচিত নাম। এই ঝুমুরের কাছে আমার নাম চাপা পড়ে যাচ্ছে! অথচ এই নাটকের পরিচালক আমাকে নাটকে রাখার কথা চিন্তাও করেননি। পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ একদিন আমাকে তার ফ্যামিলি ক্রাইসিস নাটকটির স্ট্ক্রিপ্ট পড়তে দিয়েছেন নিছক আনন্দের জন্য।

আমার খুব ভালো লেগেছে জেনে তাৎক্ষণিক তিনি বললেন অভিনয় করতে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। তারপরের সবই যেন ইতিহাস!'

ফ্যামিলি ক্রাইসিস প্রচারিত হয় এনটিভিতে। টিভি ছাড়াও ইউটিউবে নাটকটির কয়েক কোটি ভিউ। ফেসবুকে স্ট্ক্রল করলেই ভেসে ওঠে নাটকটির ছোট ছোট অংশ।

এভাবেই ছড়িয়ে গেছে আদুরে ঝুমুর। মানে আমাদের আড্ডার সারিকা সাবা। এ ছাড়াও তার মিশন বরিশাল, লাভলি ওয়াইফ কিংবা ম্যাজিক অব লাভ নাটকগুলো তাকে এনে দিয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। অথচ অভিনয়ে তার পথচলা শুরু ২০১৮ সালের এই জানুয়ারি মাস থেকেই। আদনান আল রাজীব ও রেদওয়ান রনির দুটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে। মোস্তফা কামাল রাজের 'ফ্রেন্ডস' তার প্রথম নাটক। এরপর কাজ করেন কাজল আরেফিন অমিসহ অনেকের সঙ্গে।

রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় আসেন সারিকা সাবা। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে করেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন। ছোটবেলায় প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও সেই পথ থেকে সরে এসেছেন তিনি। শৈশবের স্বপ্ন থেকে সরে এসেছেন বৃষ্টি আর সঞ্চিতাও। তিনজনেরই ধ্যান-জ্ঞান এখন অভিনয়। আড্ডায় তাই জানালেন তারা।

শীতের সূর্য আস্তে আস্তে পশ্চিম আকাশ বেয়ে নামতে থাকে। লিফট ধরি আমরাও। লিফটের সামনেই ঝুমুর পড়ে সেলফির খপ্পরে। সেলফি শেষে আলতো হেসে- 'এত মধুর যন্ত্রণা!' 

আরও পড়ুন

×