ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঈদের ছবি নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধ, বিরক্ত সিনিয়র শিল্পীরা

ঈদের ছবি নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধ, বিরক্ত সিনিয়র শিল্পীরা

রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২২ | ০১:০১ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ | ০২:০৫

অনেক দিন পর আবারও সিনেমা হলে ফিরতে শুরু করেছেন দর্শক। নিজেদের সিনেমা মানসম্পন্ন, ভিন্নধর্মী, সময়োপযোগী- এমন দাবি করছেন শিল্পী ও নির্মাতারা। আলোচনায় থাকতে এবং ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য কথার লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁরা। তারকাদের বিপরীতমুখী আলোচনা ও সমালোচনায় সাধারণ দর্শকদের সিনেমার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেক দিন পর সিনেমায় সিনেমায় যেন টক্কর। 

এবার ঈদে মুক্তি পেয়েছে তিনটি সিনেমা- 'দিন :দ্য ডে', 'পরাণ' ও 'সাইকো'; যা মন্দা সময় পেরিয়ে চলচ্চিত্রে সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। সিনেমা হলগুলোয় দর্শকের যে ভিড় চোখে পড়েছে- তা সত্যিই অবাক করার মতো। কারণ, বহুদিন সিনেমা হলগুলোয় এত ভিড় দেখা যায়নি। এ নিয়ে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, 'ভালো কাজই দর্শককে হলমুখী করতে পারে- তার প্রমাণ এবারের ঈদের ছবি।' তাঁদের এ কথায় আমাদের সিনেমা নিয়ে নতুুন করে আশার জাল বুনতেই পারি। কিন্তু সম্ভাবনার এই আলো কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে নির্মাতা ও শিল্পীদের বিপরীতমুখী আলোচনা-সমালোচনায়।

রীতিমতো কথার যুদ্ধে মেতে উঠেছেন তাঁরা। যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিলের শতকোটি টাকা বাজেটের ছবি 'দিন :দ্য ডে'। বিভিন্ন দেশে চিত্রায়ণ, বাংলাদেশ-ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা, অনন্ত-বর্ষা জুটির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের অভিনয় এবং ইরানের আলোচিত নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজমের পরিচালনা- সবই দর্শকের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছিল। হল সংকটের মধ্যে শতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টিও ছিল কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু মুক্তির পর দেখা গেল, 'দিন :দ্য ডে' নিয়ে শুরুতে যতটা আলোচনা ছিল, ততটা প্রশংসাসূচক কথা শোনা যাচ্ছে না।

বাজেটকে বড় করে দেখিয়ে অনেকেই এই ছবির সমালোচনায় মেতেছেন। অন্যদিকে, রায়হান রাফি পরিচালিত ছবি 'পরাণ' ক্রমশ মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে দর্শকের। যাঁদের অনেকে স্বীকার করেছেন, 'পরাণ'-এর মতো একটি ছবির জন্যই তাঁরা এত দিন প্রতীক্ষায় ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও 'পরাণ' নিয়ে দর্শক ইতিবাচক মন্তব্য তুলে ধরছেন। যা দেখে ঈদে হাতেগোনা কয়েকটি হলে মুক্তি পাওয়া এই ছবির শো সংখ্যাও বাড়িয়ে দিয়েছেন হল মালিকরা। অন্যদিকে অনন্য মামুন পরিচালিত 'সাইকো' নিয়ে আলোচনার ঝড় না উঠলেও নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়নি।


যাতে প্রমাণ হয়, 'সাইকো' আলোড়ন না তুললেও দর্শককে হতাশ করেনি। এই যখন বাস্তব চিত্র, তখন দেখা গেল, ঈদের ছবি নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধে মেতে উঠেছেন শিল্পী, নির্মাতা, দর্শক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র-সংশ্নিষ্ট অনেকে। বিশেষ করে অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিল ও অভিনেত্রী বর্ষার বেশ কিছু মন্তব্য নিয়ে নাখোশ হয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন পত্রিকার নিউজ শেয়ার করেন। যার শিরোনামটা ছিল "হলে 'পরাণ'-এর দর্শক নেই, সোশ্যাল মিডিয়াতে ফাঁকা আওয়াজ।" আর এটা দেখেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন 'পরাণ' সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটাক্ষ করে লিখেছেন, "শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের সিনেমার সাফল্যে এত জেলাস ফিল করলে তো 'চাপ :দ্য প্রেশার' বাড়বে।" এর আগেও 'দিন :দ্য ডে' ছবির প্রচারণায় একটি টিভি আয়োজনে অনন্ত জলিল ।

'সাইকো' ছবির পরিচালক অনন্য মামুন সম্পর্কে বলেছেন, তাঁকে সামনে পেলে কান ধরে উঠবস করাবেন। 'সাইকো' ছবির প্রচারণায় এক সাক্ষাৎকারে অনন্য মামুন 'দিন :দ্য ডে' ছবির বাজেট ১০০ কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন অনন্ত জলিল। বলেছেন, 'অনন্য মামুনকে আমি ডিরেক্টর বানিয়েছি। আমার টাকায় ওর ডিরেক্টর ফি [পরিচালক সমিতির সদস্যপদ] পর্যন্ত দিয়েছি, এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। সমালোচনা যদি আমার সামনে কোনো দিন করে, আর আমার চোখে পড়ে ওকে [অনন্য মামুন] তো আমি কান ধরে ওঠাব-বসাব। ওর এত বড় সাহস কোথা থেকে হলো, ওর কী যোগ্যতা আছে অনন্ত জলিলকে সমালোচনা করার।' এখানেই শেষ নয়, 'দিন :দ্য ডে'র প্রচারণায় গিয়ে অভিনেত্রী বর্ষা এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা শুনে অনেকে হতবাক। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, অনন্তের নায়িকা শুধু বর্ষা কেন?এর উত্তরে বর্ষা বলেন, 'কী টাইপের নায়িকা আপনাদের পছন্দ? সেই নায়িকা পছন্দ- যারা পেটে সন্তান নিয়ে কিংবা সন্তান প্রসব করে আড়ালে থাকে? নাকি যারা হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা নিয়ে ধরা পড়ে পুলিশের হেফাজতে থাকে? যেসব নায়িকা বিয়ের শাড়িটাও স্পন্সর নিয়ে পরে তাদের পছন্দ? তাদের অনন্ত জলিলের সঙ্গে মানাবে? আমি সেই গ্র্রেডের নায়িকা নই। আমি আমার জায়গায় আছি।' বর্ষার এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে অভিনেত্রী পরীমণি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁদের কাছে এমন কথা সত্যি আশা করেন না।

অভিনেত্রী মিম সরাসরি জানিয়েছেন, তিনি নিজের বিয়ের শাড়ি নিজের টাকায় কিনেছেন। তাই এ নিয়ে কে কী বলল, সেটা নিয়ে ভাবছেন না। এও বলেছেন, আমরা যাঁরা একই অঙ্গনে কাজ করি, তাঁদের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কথা বলা উচিত।আমি কখনও কাউকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে চাই না, আমার পরিবার থেকেও সেই শিক্ষা পাইনি।

এদিকে 'দিন :দ্য ডে'র আরেকটি প্রচারণায় অংশ নিয়ে বর্ষা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, 'একটা বিষয় খুব দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, কে বা কারা জানি না, ইচ্ছাকৃতভাবে নেগেটিভ কথাবার্তা প্রচার করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আমার সিনেমা বাদ দিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত স্ব্বার্থে ডাউন করার চেষ্টা করছে। খুব কষ্ট পেলাম। ভালো জিনিস কেন মানুষ প্রশংসা করতে পারে না। আজকে যদি আমরা চলচ্চিত্র না করি, তাহলে আমাদের কিছুই হবে না। আমরা যে চেষ্টা করছি ভালো একটা সিনেমা দিতে, সেটা থেমে যাবে।'

অন্যদিকে অনন্ত জলিল দাবি করেছেন, তিনি বলিউডকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁর চলাফেরা। এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনলে সবাই তাঁর ছবির দর্শক। মন্ত্রী থেকে কৃষক- কেউ তাঁর ছবি দেখা থেকে বিরতি থাকেননি। তাঁর এ কথায় অহংকার স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। অভিনেতা ডিপজল বলেন, 'বাস্তবতা মানতে হবে। সিনেমার পরিস্থিতি ভালো না। এর মধ্যে কিছু সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। তবে যে সিনেমাটি নিয়ে বেশি সমালোচনা শুনছি, তা কাম্য নয়।'

অভিনেত্রী নূতনের কথায়, 'টাকা দিয়ে ভালো ভিডিওচিত্র বানানো যায়, তবে মনে দাগ কাটার মতো ফিল্ম বানাতে টাকার পাশাপাশি মেধা লাগে, ফিল্মের জন্য ত্যাগ লাগে। টাকা দিয়ে নিজে ছবি করে হিরো হওয়া যায়; অভিনেতা-অভিনেত্রী না।' অঞ্জনার কথায়, 'অনন্ত জলিল অন্তর্জাতিক ছবি বলে বলে বিরক্তি ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জানা উচিত, তিনি যা আন্তর্জাতিক বলছেন, এ দেশে তার সূচনা ৩০ বছর আগেই হয়েছিল। তাই নিজেকে বড় প্রমাণ করার আগে সঠিক তথ্য জেনে কথা বলা উচিত।'

নানা জনের নানা মত আর বাগ্‌যুদ্ধ চলছেই। তবে সবারই চাওয়া, বাগ্‌যুদ্ধ থেকে সরে এসে দেশীয় সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে একযোগে কাজ করা উচিত।

আরও পড়ুন

×