নাটকে অন্য শিল্পী পায় ৯০ হাজার, আমাকে দেয় ১৫ হাজার: আসাদ

রাইসুল ইসলাম আসাদ
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩ | ১৪:৪৪ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ | ১৪:৫৮
রাইসুল ইসলাম আসাদ। বরেণ্য এ অভিনেতার ৭০তম জন্মদিন ছিল গতকাল। জন্মদিন, অভিনয় ভুবন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এমদাদুল হক মিলটন
সমকালের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কেমন কাটল বিশেষ বিশেষ এই দিনটি ?
বরাবরই এই দিনে নিজের মতো করে থাকি। এবারও তা-ই। বাসাতেই আছি। জন্মদিন নিয়ে আমার মধ্যে তেমন উচ্ছ্বাস নেই। এ নিয়ে কিছু বললেও ভালো লাগে না। এমন কিছু করে ফেলেনি, যার কারণে আমার জন্মদিন নিয়ে চারদিকে হইচই হবে। জন্মগ্রহণ করে পৃথিবীতে আসার পেছনে আমার কোনো হাত নেই। যাদের জন্য আমার পৃথবীতে আসা, তারা হলেন আমার বাবা-মা। তারা দু’জনই এখন পৃথিবীতে নেই। তাদেরকে ছাড়া জন্মদিন ভাবতে পারি না। সবার কাছে দোয়া চাই যেন ভালো থাকি, সুস্থ থাকি।
এই বয়সে এসে আপনার না-হয় জন্মদিন উদযাপনে আগ্রহ নেই। ছোটবেলা এই বিশেষ দিনটি কীভাবে কাটাতেন?
কোনো সময়ই আমার জন্মদিন নিয়ে কোনো বাড়তি আগ্রহ ছিল না। মাতামাতিও করিনি। আমি জন্মেছি কেন? কী কারণে পৃথিবীতে আসা– এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ৭০ বছর পার হয়ে গেছে [হাসি]। এখনও উত্তর খুঁজে পাইনি।

৭১ বছরে পা রাখলেন। আপনার সেরা অর্জন কী বলে মনে করেন?
একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে পেরেছি এটিই বড় পাওয়া। বাংলাদেশ যদি আরও হাজার বছর বেঁচে থাকে কোটি কোটি লোক জন্মাবে। তারা তো দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করতে পারবে না। এসব ভেবে গর্বে বুক ভরে যায়।
অভিনয়ে তো আপনাকে এখন দেখাই যায় না...
সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের কাজ করেছি। এরপর মন সায় দেয়নি বলে কাজ করিনি। ২০১৯ সাল থেকে পাঁচ বছরে মনে হয় ১০ দিন শুটিং করেছি। আমি তো অভিনেতা হতেই চাইনি। আমাকে জোর করে অভিনেতা বানানো হয়েছে। ৫০ বছর টানা অভিনয় করে গেছি। চলতি বছর ৫১ পার হলো। এখন না-হয় একটু থামি। করোনার আগে থেকেই কাজ কমিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরও অনুরোধের ঢেঁকি গেলার মতো কিছু কাজ করতে হয়েছে। পরে নিজের মধ্যে উপলব্ধি হলো, কী কারণে এ কাজগুলো করছি? কেন করছি? টাকা কামানোর জন্য অভিনয় কোনো কালেই আমি করিনি। আগামীতেও করতে চাই না।

অভিনয় ছাড়া থাকতে কেমন লাগে?
মনেই হয় না কোনোকালে আমি অভিনয় করতাম। আমার মাথা থেকে ইরেজ হয়ে গেছে। এখন অভিনয় করতে গেলে অভিনয় করতে পারব কিনা সন্দেহ আছে।
নির্মাতারা আপনাকে কাজের জন্য তাড়া দেন না?
অবশ্যই দেন। সবাইকে ‘না’ বলতে হচ্ছে। আগে নাটকের জন্য ১৫ হাজার টাকা চাইলেও অনেকেরই গলা শুকিয়ে যেত। এখন নাটকের প্রস্তাব নিয়ে এলেই তাদের বলি– কত টাকা দেবে? এমন অঙ্ক দাবি করি, তারা আমাকে ডাকেই না। আমি কম পয়সায় কাজ কেন করব! ৫০ বছর অভিনয় ক্যারিয়ার। প্রতিদিন যে নাটকে আমার পারিশ্রমিক ১৫ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়, একই নাটকে অন্য একজন শিল্পী পান ৯০ হাজার টাকা; সেই নাটক আমি কেন অভিনয় করতে যাব!
অভিনয় ব্যস্ততা নেই। সময় কাটছে কী করে?
যখন ইচ্ছা খাই-দাই-ঘুমাই। আমার কোনো রুটিন নেই। টেলিফোনে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলি। পড়াশোনা করি। এভাবেই সময় কেটে যায়। আগে শুটিং থাকলে খুব ভোরে উঠতে হতো। বাসায় ফিরতাম গভীর রাতে। এখন ঝামেলামুক্ত জীবন। করোনার প্রাদুর্ভাব আমার জীবনের রুটিন বদলে দিয়েছে। সেই রুটিনমাফিক এখন চলছি। বলতে পারেন একেবারে নতুন ধরনের মানুষে পরিণত হয়েছি।
সহকর্মীদের মিস করেন না?
হ্যাঁ মিস করি। এক সময় আমি সবাইকে ফোন দিতাম। একপর্যায়ে মনে হলো আমাকে তো কেউ ফোন করে না। তখন ফোন করা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমার কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। অনেককেই বলতে শুনি, আসাদ ভাই আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেন না।
অনেক বলছেন, চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। আপনার কী মনে হয়?
আমিও তাই শুনি। চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো হলে তো ভালো। অনেক টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় খুব লেখালেখিও হচ্ছে। হু হু করে শো বাড়ছে। নির্মাতা-প্রযোজকরা খুব আওয়াজ দিচ্ছেন। ছয় মাস পরে তাদের সঙ্গে যখন কথা হবে তখন বলতে শুনি ‘না রে ভাই ছবির ব্যবসা ভালো হয়নি’, ‘একটি সিনেমা করতে তো অনেক টাকা লাগে, অত টাকা ওঠে না।’ তাহলে এই চাপাবাজি কেন হচ্ছে। ‘লস’ কথাটি কেন শুনতে হয়। ‘বাম্পার’ ‘ডিস্টেম্পার’ অমুক তমুক বলে লাভ কী। আমরা কখন যে সত্যি বলি আর কখন যে মিথ্যা বলি সেটিই মাথায় ঢুকে না। সত্যি বলতে সমস্যা কী? মিথ্যা বলা কি খুবই জরুরি! শুনেছি ঈদের তিনটি সিনেমা ভালো চলছে। এটি চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক। আমরা তো চাই দর্শক হলে আসুক। সিনেমা দেখুক। বন্ধ হওয়া সিনেমা হল চালু হোক।
এখন সিনেমা মুক্তি পেলে চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত কাটান বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
আমি মনে করি একটি সিনেমা রিলিজ হলে শিল্পীর কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না। এখন দেখছি শিল্পীদেরই দায় বেশি। তাঁকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে বাদরের নাচ নাচতে হয়। যোগ দিতে হয় টিভি অনুষ্ঠানে। আমি এর মধ্যে কখনোই ছিলাম না। এসব নিয়ে আমি কথা বলি বলে আমাকে কেউ দেখতে পারেন না। সিনেমার প্রমোশন করতে হলে শিল্পীর জন্য আলাদা বাজেট থাকতে হবে। শিল্পীরা এখন প্রচার-প্রচারণায় যতটা সময় দেন শুটিংয়েও এত সময় দেন না। সিনেমা প্রচারে শিল্পীদের এমন অংশগ্রহণ নাকি পৃথিবীজুড়েই চলছে।
- বিষয় :
- রাইসুল ইসলাম আসাদ
- অভিনেতা
- বিনোদন