মা ছিলেন তার অন্তহীন আকাশ

সাদি মহম্মদ। ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১৪:১৪ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১৪:১৫
জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে,/ বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে– এত দিন রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে যিনি শ্রোতা-হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটিয়েছেন, সেই প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ বুধবার স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিলেন। গত বছরের ৮ জুলাই মা জেবুন্নেসা সলিমউল্লাহকে হারিয়েছেন এই শিল্পী। মা হারানোর একটি বছর না পেরোতেই নিজেও অনন্তের পথে যাত্রা করলেন। তাঁর চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। জানা গেছে, মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান সাদি মহম্মদ। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতার করলেন। এর পরই চির প্রস্থান।
যেভাবে মৃত্যু
সাদি মহম্মদ ও শিবলী মোহাম্মদ– আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের দুই ধ্রুবতারা হিসেবেই পরিচিত। একজন গানের মানুষ, অন্যজন নৃত্যের। তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করে গায়কের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহম্মদ বলেন, মৃত্যুর দিনও তানপুরা নিয়ে সংগীতচর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখা যায়, তার ঘরের দরজা বন্ধ। কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমরা দরজা ভেঙে ফেলি। তখন দেখতে পাই তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ।
মা ছিলেন অন্তহীন আকাশ
গত বছর মাকে হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যান সাদি মহম্মদ। তখন বলেছিলেন, ‘৭১ সালের ২৬ মার্চ বাবাকে যখন পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে, তখন আমার এই মায়ের কোলে ছিল ১০টি সন্তান। এই মা আমাদের ১০ ভাই-বোনকে একা মানুষ করেছেন। সেলাই মেশিন চালিয়ে আমাদের ভাত খাইয়েছেন, পড়াশোনা করিয়েছেন। এই মা ছিলেন আমার কাছে অন্তহীন আকাশ। যে আকাশে আমি পাখা মেলে দিতাম পাখির মতো, সেই আকাশটা আজ থেকে আর নেই।’ সাদি মহম্মদ সেদিন আরও জানিয়েছিলেন, তাঁর মা ৭১ সালের ২৬ মার্চের সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। সেদিন থেকে দুটো পা ভেঙে অকেজো হয়। এর পর লম্বা সময় ক্রাচ এবং শেষ ১৫ বছর হুইলচেয়ারে জীবন কাটিয়েছেন; একই বাড়িতে। সেই মাকে হারানোর ব্যথা বুকে চেপে একই বাড়িতে তিনিও বেছে নিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ।
জীবন ও কর্ম
সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একজন কিংবদন্তি শিল্পী ও সুরকার। রবীন্দ্রসংগীতে তাঁর মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তাঁর কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এ ছাড়া তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাঁর বাবা সলিমউল্লাহকে হত্যা করে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর বাবার নামে।
- বিষয় :
- সাদি মহম্মদ
- মৃত্যু