কপিকল অপারেটর থেকে মাইকেল জ্যাকসন

মাইকেল জ্যাকসন
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪ | ১৯:৩৪
বিশ্বের সবচেয়ে সফল সেলিব্রেটি বলা হয় মাইকেল জ্যাকসনকে। তাঁকে নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট জন্ম নেওয়া এই গায়ক মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন গান গাওয়া। মাত্র ৫০ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট ওষুধের বিষক্রিয়ায় তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মৃত্যুর আগে দুই দশক ধরেই পপসংগীত, বিনোদন আর মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন প্রায় সমার্থক। তাঁর চলে যাওয়ার দিনকে স্মরণ করেই শিল্পীর বর্ণাঢ্য জীবনের আদ্যপান্ত নিয়েই এ আয়োজন।
কপিকল অপারেটরের কাজ করতেন
মৃত্যুর এত বছর পরও আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তাঁর। তাঁর পরিবার ছিল আফ্রো-আমেরিকান। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে মাইকেল জ্যাকসনকে কপিকল অপারেটর হিসেবে কারখানায় কাজ করতে হয়েছে। মাইকেল জ্যাকসন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাঁর ভাইদের সঙ্গে ‘জ্যাকসন-৫’ মিউজিক্যাল গ্রুপে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ ১৯৬৯ সালে প্রকাশ হয়। এ অ্যালবামের প্রথম একক গান ‘আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক’ ১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে বিলবোর্ডের হট তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে নেয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এককভাবে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘বেন’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে তাঁর পরবর্তী অ্যালবাম বের হয়। এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘অফ দ্য ওয়াল’। এর ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট অ্যানাফ’ ও ‘রকিং উইথ ইউ’ গান দুটির মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। মাইকেলের সবচেয়ে বিক্রীত অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘থ্রিলার’, ‘ব্যাড’, ‘ডেঞ্জারাস’ এবং ‘হিস্ট্রি’। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবাম। মাইকেল জ্যাকসনের গানের ভিডিওগুলো বিশ্ববাসীকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। ‘বিট ইট’ গানটি প্রচার করে শিরোনামে আসে এমটিভির নাম।
প্রথম বিয়ে
১৯৯৪ সালের আগস্টে এলভিস প্রিসলির কন্যা লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করেন মাইকেল জ্যাকসন। ১৯৯৬ সালেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর মাইকেল জ্যাকসন ডিবোরাহ নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। কৃত্রিম উপায়ে তাদের দুটি সন্তান হয়। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে ছেলে প্রিন্স মাইকেল জ্যাকসন এবং ১৯৯৮ সালে মেয়ে প্যারিস মাইকেল জ্যাকসনের জন্ম হয়। ১৯৯৯ সালে ডিবোরাহর সঙ্গেও মাইকেল জ্যাকসনের ডিভোর্স হয়ে যায়। প্যারিস, প্রিন্স ও জ্যাকসন জুনিয়র, মাইকেলের তিন সন্তান।
১৫০ বছর বাঁচার কৌশল
১৫০ বছর বাঁচার ইচ্ছে ছিল মাইকেল জ্যাকসনের। এ জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ চিকিৎসাবিজ্ঞানের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করেন এই গায়ক। নিজের ক্লোন তৈরি করে অমর হতে চেয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। মৃত্যুর আগে এর জন্য তিনি লাখ লাখ ডলার ব্যয়ও করেছেন। তাঁর জীবনী লেখক মাইকেল সি লাকম্যান এক সাক্ষাৎকারে সাড়া জাগানো এ তথ্য দেন। জ্যাকসন তাঁর ক্লোন নিয়ে গবেষণার জন্য ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের লাখ লাখ ডলার দিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল এ ক্লোন থেকে একটি খুদে জ্যাকসন দলের সৃষ্টি হবে এবং তারাও একদিন তাঁর মতো দুনিয়া মাতাবে। পানামাভিত্তিক একটি আয়ুষ্কাল কেন্দ্রে মাইকেল জ্যাকসন একটি ‘গোপন শুক্রাণু প্রকল্প’ গড়ে তুলেছিলেন বলে দাবি করা হয়। আর এই ইচ্ছার পেছনে কাজ করেছিল ক্লোনিংয়ে সাফল্য। বিজ্ঞানীরা ভেড়ার ক্লোন থেকে সফলভাবে ‘ডলি’র জন্ম দেওয়ার পর নিজের ক্লোনিং নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন জ্যাকসন। সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য তিনি এ পন্থা বেছে নিয়েছিলেন। একবার তিনি দাবি করেছিলেন, অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমানোর জন্য অন্তত ১৫০ বছর বাঁচবেন তিনি।
অমীমাংসিত মৃত্যুরহস্য
মাইকেল জ্যাকসনের হঠাৎ মৃত্যুর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পেইন কিলার সেবনকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এটা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক। যে বিতর্কের সুরাহা হয়নি আজও। শুরুতে জানানো হয়েছিল, তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেছে। তখন হুট করেই বোম ফাটায় দ্য সান পত্রিকা। তাদের এক খবরে বলা হয়, ডেমারোল নামে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যথানাশক ইনজেকশন নেওয়ার কারণেই জ্যাকসনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ডেমারোল নেওয়ার পর থেকেই জ্যাকসনের শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এসে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া ও মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ার সময়টিতে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মুরে। রহস্য ঘনীভূত হয় যখন দেখা গেল, মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর সময়টিতে মুরে উপস্থিত থাকলেও ডেথ সার্টিফিকেটে তিনি স্বাক্ষর করেননি। তাঁকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। পপস্টারের মৃত্যুর জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও তাঁর গাফিলতিই দায়ী বলে লস অ্যাঞ্জেলেসের আদালত রায় দেয়। যদিও মুরের আইনজীবীরা দাবি করেন, জ্যাকসন স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত মাত্রায় ওই ওষুধটি নিয়েছিলেন। তবে কি এটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা হিসাব কষে দুইয়ে দুইয়ে চার আজও মিলেনি।
কোটি ডলারে প্লাস্টিক সার্জারি
জ্যাকসন সব সময়ে সঙ্গী হিসেবে সুন্দরী আর ফর্সা মেয়েদেরই বেশি প্রাধান্য দিতেন। কৃষ্ণাঙ্গ বলে সমাজে নিচু চোখে দেখছে সবাই– এই মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনে প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে ফর্সা করে তোলেন। নিজের চেহারার কৃষ্ণাঙ্গ থেকে শ্বেতাঙ্গে রং বদল নিয়ে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাঁকে। ১৯৭৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন তাঁর প্রথম কসমেটিক অপারেশনটি করান এবং তার পরপরই একটি অ্যাক্সিডেন্টে তাঁর নাক ভেঙে যায়। তিনি ত্বকের সমস্যায়ও ভুগছিলেন।
যে কারণে মাস্ক ব্যবহার করতেন মাইকেল জ্যাকসন
টুইটারে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ মাইকেল জ্যাকসনের মুখে কালো রঙের মাস্ক পরা একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘স্মার্ট হোন, নিরাপদে থাকুন’। কেবল কালো নয়, প্রায়ই সাদা আর রুপালি রঙের সার্টিন কাপড়ের মাস্ক পরিহিত অবস্থায়ও দেখা গেছে জ্যাকসনকে। আর তা নিয়ে লোকের টিপ্পনী আর হাসাহাসিও কম শুনতে হয়নি মাইকেল জ্যাকসনের বডিগার্ড ম্যাট ফিডেসকে। তাই অন্তত আলোকচিত্রীদের সামনে মাস্ক পরতে নিষেধ করেছিলেন ম্যাট। তখন মাইকেল জ্যাকসন বলেছিলেন, ‘আমি মানুষের মন জুগিয়ে চলার জন্য অসুস্থ হতে পারি না। সামনেই আমার বেশ কয়েকটা কনসার্ট। আমি গলা খারাপ করে এসে ভক্তদের নিরাশ করতে পারি না। আমাকে নিজের শরীরের খেয়াল রাখতে হবে। আমার এই পৃথিবীতে আসার একটা উদ্দেশ্য আছে। সেটা পূরণ করার জন্য আমার গলার আর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি।’ কিন্তু অনেকেই আবার বলে থাকেন, বারবার প্লাস্টিক সার্জারির কারণে চর্মরোগের কারণে তিনি মুখোশ পরে থাকতেন।
- বিষয় :
- মাইকেল জ্যাকসন